পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

কাটিয়ে যায়। প্যারিসের একটি নিকটবর্তী স্টেশনে স্পেশল ট্রেন প্রস্তুত রাখবার জন্যে টেলিগ্রাফ করা গেল।

 রাত দুটোর সময় আমাদের জাগিয়ে দিলে। ট্রেন বদল করতে হবে। জিনিসপত্র বেঁধে বেরিয়ে পড়লুম। বিষম ঠাণ্ডা। অনতিদুরে আমাদের গাড়ি দাঁড়িয়ে। কেবলমাত্র একটি এঞ্জিন, একটি ফাস্ট্ ক্লাস এবং একটি ব্রেক্‌ভ্যান। আরােহীর মধ্যে আমরা তিনটি ভারতবর্ষীয়। রাত তিনটের সময় প্যারিসের জনশূন্য বৃহৎ স্টেশনে পোঁছনো গেল। সুপ্তোত্থিত দুই-একজন ‘ম্যসিয়’ আলো হস্তে উপস্থিত। অনেক হাঙ্গাম করে নিদ্রিত কাস্টম হৌসকে জাগিয়ে তার পরীক্ষা থেকে উত্তীর্ণ হয়ে একটা গাড়ি ভাড়া করলুম। তখন প্যারিস তার সমস্ত দ্বার রুদ্ধ করে স্তব্ধ রাজপথে দীপশ্রেণী জ্বালিয়ে রেখে নিদ্রামগ্ন। আমরা হােটেল ট্যার্মিনুতে আমাদের শয়নকক্ষে প্রবেশ করলুম। পরিপাটি, পরিচ্ছন্ন, বিদ্যুদুজ্জল, স্ফটিকমণ্ডিত, কার্পেটাবৃত, চিত্রিতভিত্তি, নীলযবনিকাপ্রচ্ছন্ন শয়নশালা― বিহগপক্ষসুকোমল শুভ্র শয্যা।

 বেশপরিবর্তন-পূর্বক শয়নের উদ্যোগ করবার সময় দেখা গেল আমাদের জিনিসপত্রের মধ্যে আর-এক জনের ওভার্‌কোট গাত্রবস্ত্র। আমরা তিন জনেই পরস্পরের জিনিস চিনি নে; সুতরাং হাতের কাছে যে-কোনাে অপরিচিত বস্তু পাওয়া যায় সেইটেই আমাদের কারও-না-কারও স্থির করে অসংশয়ে সংগ্রহ করে আনি। অবশেষে নিজের নিজের জিনিস পৃথক করে নেবার পর যখন দুটোচারটে উদ্‌বৃত্ত সামগ্রী পাওয়া যায়, তখন তা আর পূর্বাধিকারীকে ফিরিয়ে দেবার কোনাে সুযােগ থাকে না। ওভার্‌কোটটি রেলগাড়ি থেকে আনা হয়েছে; যার কোট সে বেচারা বিশ্বস্তচিত্তে গভীর নিদ্রায় মগ্ন। গাড়ি এতক্ষণে সমুদ্রতীরস্থ ক্যালে নগরীর

৯৫