পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

করলুম কোথায় থাকেন? সে বললে, আমি জানি নে, আপনারা ঘরে এসে বসুন, আমি জিজ্ঞাসা করে আসছি। পূর্বে যে ঘরে আমরা আহার করতুম সেই ঘরে গিয়ে দেখলুম সমস্ত বদল হয়ে গেছে― সেখানে টেবিলের উপর খবরের কাগজ এবং বই— সে ঘর এখন অতিথিদের প্রতীক্ষাশালা হয়েছে। খানিক ক্ষণ বাদে দাসী একটি কার্ডে লেখা ঠিকানা এনে দিলে। আমার বন্ধু এখন লন্‌ডনের বাইরে কোন্‌-এক অপরিচিত স্থানে থাকেন। ভারী নিরাশ হৃদয়ে আমার সেই পরিচিত বাড়ি থেকে বেরলুম।

 মনে কল্পনা উদয় হল, মৃত্যুর বহুকাল পরে আবার যেন পৃথিবীতে ফিরে এসেছি। আমাদের সেই বাড়ির দরজার কাছে এসে দ্বারীকে জিজ্ঞাসা করলুম— আমার সেই অমুক এখানে আছে তাে? দ্বারী উত্তর করলে— না, সে অনেক দিন হল চলে গেছে। চলে গেছে? সেও চলে গেছে! আমি মনে করেছিলুম কেবল আমিই চলে গিয়েছিলুম, পৃথিবী-সুদ্ধ আর সবাই আছে। আমি চলে যাওয়ার পরেও সকলেই আপন আপন সময়-অনুসারে চলে গেছে। তবে তো সেই-সমস্ত জানা লােকেরা আর-কেহ কারও ঠিকানা খুঁজে পাবে না! জগতের কোথাও তাদের আর নির্দিষ্ট মিলনের জায়গা রইল না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছি এমন সময়ে বাড়ির কর্তা বেরিয়ে এলেন― জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কে হে! আমি নমস্কার করে বললুম, আজ্ঞে, আমি কেউ না, আমি বিদেশী। কেমন করে প্রমাণ করব এ বাড়ি আমার এবং আমাদের ছিল! একবার ইচ্ছে হল, অন্তঃপুরের সেই বাগানটা দেখে আসি―আমার সেই গাছগুলাে কত বড়ো হয়েছে। আর সেই ছাতের উপরকার দক্ষিণমুখো কুঠরি, আর সেই ঘর এবং সেই ঘর এবং সেই আর-একটা ঘর। আর সেই-যে ঘরের সম্মুখে বারান্দার উপর ভাঙা টবে গােটাকতক জীর্ণ

৯৮