পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

যেখানে যাই তাঁকে সঙ্গে টেনে নিয়ে যাই, এবং তিনি যেখানে যান আমরা কিছুতেই তাঁর সঙ্গ ছাড়ি নে। কিন্তু একটা আশঙ্কা আছে এ রকম অবিচ্ছেদ্য বন্ধুত্ব এ পৃথিবীতে সকল সময় সমাদৃত হয় না। হায়! এ সংসারে কুসুমে কণ্টক, কলানাথে কলঙ্ক, এবং বন্ধুত্বে বিচ্ছেদ আছে― কিন্তু, ভাগ্যিস আছে!

 আজ বন্ধুসহায় হয়ে নিশ্চিন্ত মনে শহর ঘােরা গেল। ন্যাশনাল গ্যালারিতে ছবি দেখতে গেলুম। বড়াে ভয়ে ভয়ে দেখলুম। কোনাে ছবি পুরােপুরি ভালাে লাগতে দিতে দ্বিধা উপস্থিত হয়। সন্দেহ হয়, কোনাে প্রকৃত সমজদারের এ ছবি ভালাে লাগা উচিত কি না। আবার যে ছবি ভালাে লাগে না তার সম্বন্ধেও মুখ ফুটে কোনাে কথা বলতে পারি নে।

 ১৫ সেপ্টেম্বর। স্যাভয় থিয়েটারে ‘গন্‌ডোলিয়ার্‌স্‌’-নামক একটি গীতিনাট্য-অভিনয় দেখতে গিয়েছিলুম। আলােকে, সংগীতে, সৌন্দর্যে, বিবিধ বর্ণবিন্যাসে, দৃশ্যে, নৃত্যে, হাস্যে, কৌতুকে মনে হল একটা কোন্ কল্পরাজ্যে আছি। মাঝে এক অংশে অনেকগুলি নর্তকনর্তকীতে মিলে নৃত্য আছে; সেখানে আমার মনে হল আমার চারি দিকে যেন কিছুক্ষণ ধরে কিন্নরলােক থেকে সৌন্দর্যের অজস্র পুষ্পবৃষ্টি হয়ে গেল। যেন, হঠাৎ এক সময়ে একটা উন্মাদকর যৌবনের বাতাসে পৃথিবী জুড়ে সুন্দর নরনারীর একটা উলটপালট ঢেউ উঠেছে— তাতে আলোক এবং বর্ণচ্ছটা, সংগীত এবং উৎফুল্ল নয়নের উজ্জ্বল হাসি সহস্র ভঙ্গীতে চারি দিকে ঠিকরে পড়ছে।

 ১৬ সেপ্টেম্বর। আজ আমাদের গৃহস্বামিনীর কুমারী কন্যা আমার কতকগুলি পুরাতন পূর্বশ্রুত সুর পিয়ানােয় বাজাচ্ছিলেন; তাই শুনে আমার গৃহ মনে পড়তে লাগল। সেই ভারতবর্ষের

১০০