পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

রৌদ্রালােকিত প্রাতঃকাল, মুক্ত বাতায়ন, অব্যাহত আকাশ এবং পিয়ানাে যন্ত্রে এই স্বপ্নবহ পরিচিত সংগীতধ্বনি।

 ১৭ সেপ্টেম্বর। যে দুর্ভাগার শীতকোর্তা আমরা বহন করে করে বেড়াচ্ছি, ইন্‌ডিয়া আপিস -যােগে সে আমাদের একটি পত্র লিখেছে― আমরাই যে তার গাত্রবস্ত্রটি সংগ্রহ করে এনেছি সে বিষয়ে পত্রলেখক নিজের দৃঢ় বিশ্বাস প্রকাশ করেছে; তার সঙ্গে ‘ভ্রমক্রমে’ বলে একটা শব্দ যােগ করে দিয়েছিল, কিন্তু সেটা আমার মনে হল মৌখিক শিষ্টতা মাত্র। একটা সন্তোষের বিষয় এই, যার কম্বল নিয়েছিলুম এটা তার নয়। ভ্রমক্রমে দুবার একজনের গরম কাপড় নিলে ভ্রম সপ্রমাণ করা কিছু কঠিন হত।

 ১৯ সেপ্টেম্বর। এখানে রাস্তায় বেরিয়ে সুখ আছে। সুন্দর মুখ চোখে পড়বেই। শ্রীযুক্ত দেশানুরাগ যদি পারেন তাে আমাকে ক্ষমা করবেন, আমার বিশ্বাস, ইংরাজ মেয়ের মতাে সুন্দরী পৃথিবীতে নেই। নবনীর মতাে সুকোমল শুত্র রঙের উপরে একখানি পাতলা টুকটুকে ঠোঁট, সুগঠিত নাসিকা, এবং দীর্ঘ পল্লববিশিষ্ট নির্মল নীল নেত্র― দেখে পথকষ্ট দূর হয়ে যায়। শুভানুধ্যায়ীরা শঙ্কিত এবং চিন্তিত হবেন এবং প্রিয় বয়স্যেরা পরিহাস করবেন, কিন্তু এ কথা আমাকে স্বীকার করতেই হবে— সুন্দর মুখ আমার সুন্দর লাগে। তাই যদি না লাগত বিধাতার উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হত। ঈফেল স্তম্ভের চতুর্থ চুড়াও আমার তেমন আশ্চর্য বােধ হয় না, একখানি সুন্দর মুখের সুমিষ্ট হাসি যেমন লাগে। সুন্দর হওয়া এবং মিষ্ট করে হাসা মানুষের যেন একটি পরমাশ্চর্য ক্ষমতা। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমার ভাগ্যক্রমে ঐ হাসিটা এ দেশে এসে কিছু বাহুল্যপরিমাণে দেখতে পাই। এমন অনেক সময়ে হয়, রাজপথে কোনাে নীলনয়না পান্থরমনীর যেমন

১০১