পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

দোকানে দোকানে ঘুরে কেটে যাচ্ছে। বাড়ি ফিরে এলেই আমার বন্ধু বলেন, এসস বিশ্রাম করি গে। তার পরে আমরা খুব সমারােহের সহিত বিশ্রাম করতে যাই। শয়নগৃহে প্রবেশ করে আমার বান্ধব অনতিবিলম্বে শষ্যাতল আশ্রয় করেন, আমি পার্শ্ববর্তী একটি সুগভীর কেদারার মধ্যে নিমগ্ন হয়ে বসি। তার পরে, আমরা কোনাে বিদেশী কাব্যগ্রন্থ পাঠ করি; নাহয় দুজনে মিলে জগতের যত-কিছু অতলস্পর্শ বিষয় আছে, দেখতে দেখতে তার মধ্যে তলিয়ে অন্তর্ধান হয়ে যাই। আজকাল এইভাবে এতই অধিক বিশ্রাম করছি যে, কাজের আর তিলমাত্র অবকাশ থাকে না। ড্রয়িংরুমে ভদ্রলােকেরা গীতবাদ্য সদালাপ করেন, আমরা তার সময় পাই নে― আমরা বিশ্রামে নিযুক্ত। শরীর রক্ষার জন্যে সকলে কিয়ৎকাল মুক্ত বায়ুতে ভ্রমণাদি করে থাকেন, সে হতেও আমরা বঞ্চিত— আমরা এত অধিক বিশ্রাম করে থাকি। রাত দুটো বাজল, আলাে নিবিয়ে দিয়ে সকলেই আরামে নিদ্রা দিচ্ছে, কেবল আমাদের দুই হতভাগ্যের ঘুমােবার অবসর নেই― আমরা তখন অত্যন্ত দুরূহ বিশ্রামে ব্যস্ত।

 ২৫ সেপ্টেম্বর। আজ এখানকার একটি ছােটোখাটো এক্‌জিবিশন দেখতে গিয়েছিলুম। শুনলুম, এটা প্যারিস এক্‌জিবিশনের অত্যন্ত সুলভ এবং সংক্ষিপ্ত দ্বিতীয় সংস্করণ। সেখানে চিত্রশালায় প্রবেশ ক’রে, কারােলু ড্যুঁরা -নামক একজন বিখ্যাত ফরাসী চিত্রকর -রচিত একটি বসনহীনা মানবীর ছবি দেখলুম। কী আশ্চর্য সুন্দর! সুন্দর মানবশরীরের মতো সৌন্দর্য পৃথিবীতে আর-কিছু নেই। আমরা প্রকৃতির সকল শােভাই দেখি, কিন্তু মর্ত্যের এই চরম সৌন্দর্যের উপর, জীব-অভিব্যক্তির এই সর্বশেষ কীর্তিখানির উপর, মানুষ স্বহস্তে একটি চির-অন্তরাল টেনে রেখে

১০৩