পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

সময় যখন সমস্ত আলাে নিবিয়ে দিয়ে কেবল স্টেজের আলাে জ্বলছিল এবং সেই আলাে স্টেজের অনতিদূরবর্তী তার আধখানি মুখের উপর এসে পড়েছিল, তখন তার আলােকিত সুন্দর সুকুমার মুখের রেখা এবং সুভঙ্গিম গ্রীবা অন্ধকারের উপর চমৎকার চিত্র রচনা করেছিল। হিতৈষীরা আমাকে পুনশ্চ মার্জনা করবেন— অভিনয়কালে বারবার সে দিকে আমার দৃষ্টি বদ্ধ হয়ে ছিল। কিন্তু দূরবীন কষাটা আমার আসে না। নির্লজ্জ স্পর্ধার সহিত পরস্পরের প্রতি অসংকোচে দুরবীন প্রয়ােগ করা নিতান্ত রূঢ় মনে হয়। এদের মধ্যে কতকগুলাে অভদ্র প্রথা আছে― যত কালই এদের সংসর্গে থাকি সেগুলাে আমাদের যেন অভ্যাস হয়ে না যায়। যেমন ঘূর্ণী নাচ― বিশেষতঃ ওয়ালট্‌জ্‌ মেয়েদের নাচ-বস্ত্র, পুরুষদের খাটো কুর্তি, নাট্যশালায় দূরবীন কষা, নিমন্ত্রণসভায় কাউকে গান-বাজনায় প্রবৃত্ত করে দিয়ে গল্প জুড়ে দেওয়া।

 ২ অক্টোবর। একটি গুজরাটীর সঙ্গে দেখা হল। ইনি ভারতবর্ষ থেকে সমস্ত পথ জাহাজের ডেকে চড়ে এসেছেন। তখন শীতের সময়। মাছ মাংস খান না। সঙ্গে চিঁড়ে শুষ্কফল প্রভৃতি কিছু ছিল এবং জাহাজ থেকে শাক সবজি কিছু সংগ্রহ করতেন। ইংরাজি অতি সামান্য জানেন। গায়ে শীতবস্ত্র অধিক নেই। লন্‌ডনে স্থানে স্থানে উদ্ভিজ্জ-ভােজের ভােজনশালা আছে, সেখানে ছয় পেনিতে তাঁর আহার সমাধা হয়। যেখানে যা-কিছু দ্রষ্টব্য জ্ঞাতব্য বিষয় আছে সমস্ত অনুসন্ধান করে বেড়ান। বড়ো বড়ো লােকের সঙ্গে অসংকোচে সাক্ষাৎ করেন। কিরকম করে কথাবার্তা চলে বলা শক্ত। মধ্যে মধ্যে কার্ডিনাল ম্যানিঙের সঙ্গে ধর্মালােচনা করে আসেন। ইতিমধ্যে এক্‌জিবিশনের সময় প্যারিসে দুই মাস যাপন করে এসেছেন এবং অবসরমত অ্যামেরিকায়

১০৫