পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

লোকের সঙ্গে হৌ-ডু-য়ু-ডু ব’লে, হাঁ ক’রে রাস্তায় ঘাটে পর্যটন ক’রে, থিয়েটার দেখে, দোকান ঘুরে, কল-কারখানার তথ্য নির্ণয় ক’রে— এমন-কি, সুন্দর মুখ দেখে আমার শ্রান্তি বােধ হয়েছে। কেবলমাত্র গতি, কোলাহল, সমারোহ— অবস্থাবিশেষে ভালাে লাগতে পারে। যদি কখনাে জীবন মনের নিতান্ত জড়ভাব উপস্থিত হয় তখন তাকে বাহিরের অবিশ্রাম আঘাতে সচেতন ক’রে ঈষৎ জীবনের উত্তাপ দান করতে পারা যায়। কিন্তু মন যখন সদাসচেতনভাবে কাজ করছে, চিন্তা করছে, ভালােবাসছে, তখন বাহিরের এই বিপরীত গােলযােগে তাকে কেবল উদ্‌ভ্রান্ত করে তােলে। বলা আবশ্যক, এই-যে গােলযােগ এ কেবল আমাদেরই পক্ষে গােলযােগ, সেখানকার নেটিভদের পক্ষে নয়। সমুদ্রের যে গর্জন সে কেবল সমুদ্রতীরেই শােনা যায়, জলজন্তুরা বেশ নিঃশব্দ নিস্তব্ধতার মধ্যে জীবন নির্বাহ করে।

 অতএব স্থির করেছি এখন বাড়ি ফিরব।

 ৭ অক্টোবর। ‘টেম্‌স্’ জাহাজে একটা ক্যাবিন স্থির করে আসা গেল। পরশু জাহাজ ছাড়বে।

 ৯ অক্টোবর। জাহাজে ওঠা গেল। এবারে আমি একা। আমার সঙ্গীরা বিলাতে রয়ে গেলেন। আমার নির্দিষ্ট ক্যাবিনে গিয়ে দেখি সেখানে এক কক্ষে চার জনের থাকবার স্থান এবং আর এক জনের জিনিসপত্র একটি কোণে রাশীকৃত হয়ে আছে। বাক্স তােরঙ্গের উপর নামের সংলগ্নে লেখা আছে ‘বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস’। বলা বাহুল্য, এই লিখন দেখে ভাবী সঙ্গসুখের কল্পনায় আমার মনে অপরিমেয় নিবিড়ানন্দের সঞ্চার হয় নি। ভাবলুম, কোথাকার এক ভারতবর্ষের রোদে ঝলস এবং শুকনাে খট্‌খটে হাড়-পাকা অত্যন্ত ঝাঁঝালাে বুনাে অ্যাংলাে-ইন্‌ডিয়ানের

১০৯