পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

সঙ্গে আমাকে এক জাহাজে পুরেছে! যাদের মধ্যে শত হস্ত ব্যবধান যথেষ্ট নয়, এইটুকু ক্যাবিনের মধ্যে তাদের দুজনের স্থান সংকুলান হবে কী করে? গালে হাত দিয়ে বসে এই কথা ভাবছি এমন সময়ে এক অল্পবয়স্ক সুশ্রী ইংরাজ যুবক ঘরের মধ্যে ঢুকে আমাকে সহাস্য মুখে ‘শুভ প্রভাত’ অভিবাদন করলেন— মুহূর্তের মধ্যে আমার সমস্ত আশঙ্কা দূর হয়ে গেল। সবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ইনি ভারতবর্ষে যাত্রা করছেন। এঁর শরীরে ইংলন্‌ডবাসী ইংরাজের স্বাভাবিক সহৃদয় ভদ্রতার ভাব এখনাে সম্পূর্ণ অক্ষুন্ন রয়েছে।

 ১০ অক্টোবর। সুন্দর প্রাতঃকাল। সমুদ্র স্থির। আকাশ পরিষ্কার। সূর্য উঠেছে। ভােরের বেলা কুয়াশার মধ্যে দিয়ে আমাদের ডান দিক থেকে অল্প অল্প তীরের চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল। অল্পে অল্পে কুয়াশার যবনিকা উঠে গিয়ে ওয়াইট দ্বীপের পার্বত্যতীর এবং ভেণ্ট্‌নর শহর ক্রমে ক্রমে প্রকাশ হয়ে পড়ল।

 এ জাহাজে বড়াে ভিড়। নিরিবিলি কোণে চৌকি টেনে যে একটু লিখব তার যাে নেই, সুতরাং সম্মুখে যা-কিছু চোখে পড়ে তাই চেয়ে চেয়ে দেখি।

 ইংরাজ মেয়ের চোখ নিয়ে আমাদের দেশের লােক প্রায়ই ঠাট্টা করে, বিড়ালের চোখের সঙ্গে তার তুলনা করে থাকে। কিন্তু, এমন সর্বদাই দেখা যায়, তারাই যখন আবার বিলাতে আসে তখন স্বদেশের হরিণনয়নের কথাটা আর তাদের বড় মনে থাকে না। অভ্যাসের বাধাটা একবার অতিক্রম করতে পারলেই এক সময়ে যাকে পরিহাস করা গিয়েছে আর-এক সময় তার কাছেই পরাভব মানা নিতান্ত অসম্ভব নয়― ওটা স্পষ্ট স্বীকার করাই ভালাে। যতক্ষণ দূরে আছি কোনাে বালাই নেই, কিন্তু লক্ষপথে প্রবেশ

১১০