পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

করলেই ইংরাজ সুন্দরীর দৃষ্টি আমাদের অভ্যাসের আবরণ বিদ্ধ ক’রে অন্তরের মধ্যে প্রবেশ করে। ইংরাজ সুনয়নার চোখ মেঘমুক্ত নীলাকাশের মতাে পরিষ্কার, হীরকের মতাে উজ্জ্বল এবং ঘন পল্লবে আচ্ছন্ন— তাতে আবেশের ছায়া নেই। অন্য কারও সম্বন্ধে কিছু বলতে চাই নে— কিন্তু একটি মুগ্ধহৃদয়ের কথা বলতে পারি, সে নীলনেত্রের কাছেও অভিভূত এবং হরিণনয়নকেও কিছুতেই উপেক্ষা করতে পারে না। কৃষ্ণ কেশপাশও সে মূঢ়ের পক্ষে বন্ধন এবং কনককুন্তলও সামান্য দৃঢ় নয়।

 সংগীত সম্বন্ধেও দেখা যায়, পূর্বে যে ইংরাজি সংগীতকে পরিহাস করে আনন্দ লাভ করা গেছে, এখন তৎপ্রতি মনােযােগ করে ততােধিক বেশি আনন্দ লাভ করা যায়। এখন অভ্যাসক্রমে য়ুরােপীয় সংগীতের এতটুকু আস্বাদ পাওয়া গেছে যার থেকে নিদেন এইটুকু বােঝা গেছে যে, যদি চর্চা করা যায় তা হলে য়ুরােপীয় সংগীতের মধ্যে থেকে পরিপূর্ণ রস পাওয়া যেতে পারে। আমাদের দেশী সংগীত যে আমার ভালাে লাগে সে কথার বিশেষ উল্লেখ করা বাহুল্য। অথচ দুয়ের মধ্যে যে সম্পূর্ণ জাতিভেদ আছে তার আর সন্দেহ নেই।

 ১৩ অক্টোবর। একটি রমণী গল্প করছিলেন, তিনি পূর্বেকার কোন্-এক সমুদ্রযাত্রায় কাপ্তেন অথবা কোনাে কোন পুরুষ যাত্রীর প্রতি কঠিন পরিহাস ও উৎপীড়ন করতেন— তার মধ্যে একটা হচ্ছে চৌকিতে পিন ফুটিয়ে রাখা। শুনে আমার তেমন মজাও মনে হল না এবং সেই-সকল বিশেষ অনুগৃহীত পুরুষদের স্থলাভিষিক্ত হতেও একান্ত বাসনার উদ্রেক হল না। দেখা যাচ্ছে, এখানে পুরুষদের প্রতি মেয়েরা অনেকটা দূর পর্যন্ত রূঢ়াচরণ করতে পারেন, তাতে ততটা সামাজিক নিলার কারণ হয় না। ভেবে দেখতে গেলে

১১১