পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

ইংরাজসমাজেও পুরুষের মধ্যে উচ্চনীচভেদ আছে ব’লেই এটা সম্ভব হতে পেরেছে। যেমন বালকের কাছ থেকে উপদ্রব অনেক সময় আমােদজনক লীলার মতাে মনে হয়, স্ত্রীলােকদের অত্যাচারের প্রতিও পুরুষেরা সেই রকম স্নেহময় উপেক্ষা প্রদর্শন করে, এবং অনেক সময় সেটা ভালােবাসে। পুরুষদের মুখের উপর রূঢ় সমালােচনা শুনিয়ে দেওয়া স্ত্রীলােকদের একটা অধিকারের মধ্যে। সেই লঘুগতি তীক্ষ্ণ তীব্রতার দ্বারা তাঁরা পুরুষের শ্রেষ্ঠতাভিমান বিদ্ধ করে আপনার গৌরব অনুভব করেন। সামাজিক প্রথা এবং অনিবার্য কারণ-বশতঃ নানা বিষয়ে তাঁরা পুরুষের অধীন ব’লেই লৌকিকতা এবং শিষ্টাচার সম্বন্ধে অনেক সময়ে তাঁরা পুরুষদের লঙ্ঘন করে আনন্দ লাভ করেন। কার্যক্ষেত্রে যারা পরস্পর সমকক্ষ প্রতিযােগী, সামাজিক আচারে ব্যবহারে তাদের মধ্যে সমান ভাবের ভদ্রতার নিয়ম থাকা আবশ্যক; কিন্তু যেখানে সেই প্রতিযােগিতা নেই সেখানে দুর্বল কিঞ্চিৎ দুরন্ত এবং সবল সম্পূর্ণ সহিষ্ণু এটা দেখতে মন্দ হয় না। এবং বলোন্মত্ত পুরুষের পক্ষে এ একটা শিক্ষা। স্ত্রীলােকের যে বল সে এক হিসাবে পুরুষেরই প্রদত্ত বল—মাধুর্যের কাছে আমরা স্বাধীনভাবে আপন স্বাধীনতা বিসর্জন করি। অবলার দুর্বলতা পুরুষের ইচ্ছাতেই বলপ্রাপ্ত হয়েছে এই জন্য যে, পুরুষের পৌরুষ আছে স্ত্রীলােকের উপদ্রব সে বিনা বিদ্রোহে আনন্দের সহিত সহ্য করে এবং এই সহিষ্ণুতায় তার পৌরুষেরই চর্চা হতে থাকে। যে দেশের পুরুষেরা কাপুরুষ তারাই কোনাে বিষয়েই স্ত্রীলােকের কাছে পরাভব স্বীকার করতে চায় না— তারাই নির্লজ্জভাবে পুরুষপূজাকে, পুরুষের প্রাণপণ সেবাকেই, স্ত্রীলােকের সর্বোচ্চ ধর্ম বলে প্রচার করে। সেই দেশেই দেখা যায় স্বামী রিক্তহস্তে আগে আগে যাচ্ছে আর স্ত্রী তার বােঝাটি বহন ক’রে

১১২