পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

 ‘অবশ্য, যোগ্যতা দু রকমের আছে-ধর্মত এবং কার্যতঃ। এমন কতকগুলি স্থল আছে যেখানে শুদ্ধমাত্র কৃতকারিতাই যােগ্যতার প্রমাণ নয়। গায়ের জোর থাকলে অনেক কাজই বলপূর্বক চালিয়ে দেওয়া যায়, কিন্তু বিশেষ বিশেষ কাজে বিশেষ বিশেষ উপযােগী নৈতিক গুণের দ্বারাই সে কার্য-বহনের প্রকৃত অধিকার পাওয়া যায়।

 ‘তুমি কেবল প্রহারের জোরে পিতার কর্তব্যসাধন করতে পার, কিন্তু পিতৃস্নেহ এবং মঙ্গল-ইচ্ছা ব্যতীত ধর্মতঃ পিতৃত্বের অধিকার জন্মে না।

 ‘কিন্তু ধর্মের শাসন সদ্য সদ্য দেখা যায় না ব’লে যে ধর্মের রাজ্য অরাজক তা বলা যায় না। এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নিষ্ঠুরতা এবং প্রতিদিনের ঔদ্ধত্য প্রতিদিন সঞ্চিত হচ্ছে, এক সময় এরা তােমাদেরই শিরে ভেঙে পড়বে।

 ‘যদি বা আমরা সকল অপমানই নীরবে অথবা কথঞ্চিৎ কলরব সহকারে সহ্য করে যাই, প্রতিকারের কোনাে ক্ষমতাই যদি আমাদের না থাকে, তবু তােমাদের মঙ্গল হবে না।

 ‘কারণ, অপ্রতিহত ক্ষমতার দম্ভ জাতীয় চরিত্রের মূল আক্রমণ করে। যে স্বাধীনতাপ্রিয়তার ভিত্তির উপর তােমাদের জাতীয় গৌরব প্রতিষ্ঠিত, তলে তলে সেই স্বাধীনতাপ্রিয়তার বিশুদ্ধতা নষ্ট করে। সেই জন্য অনেক ইংলন্‌ড্‌বাসী ইংরাজের কাছে শােনা যায় ভারতবর্ষীয় ইংরাজ একটা জাতই স্বতন্ত্র; কেবলমাত্র বিকৃত যকৃৎই তার একমাত্র কারণ নয়, যকৃতের চেয়ে মানুষের আরো উচ্চতর অন্তরিন্দ্রিয় আছে— সেটাও নষ্ট হয়ে যায়।

 ‘কিন্তু আমার এ বিভীষিকায় কেউ ডরাবে না। যার দ্বারে অর্গল নেই সেই অগত্যা চোরকে সাধুভাবে ধর্মোপদেশ দিতে বসে;

১১৭