পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

থাকত তা হলে লাথিও খেতে, বেঁচেও থাকতে, এবং পুনশ্চ দ্বিতীয়বার খাবার অবসর পেতে।

 ‘যা হােক, ভদ্রনাম ধারণ করে অসহায়কে অপমান করতে যার সংকোচ বােধ হয় না, তাকে এত কথা বলাই বাহুল্য। বিশেষতঃ যে ব্যক্তি অপমান সহ্য করে, দুর্বল হলেও, তাকে যখন অন্তরের সঙ্গে ঘৃণা না ক’রে থাকা যায় না।

 ‘কিন্তু একটা কথা আমি ভালাে বুঝতে পারি নে। ইংলন্‌ডে তত তােমাদের এত বিশ্বহিতৈষিণী মেয়ে আছেন, তাঁরা সভাসমিতি করে নিতান্ত অসম্পর্কীয় কিম্বা দূরসম্পর্কীয় মানবজাতির প্রতিও দূর থেকে দয়া প্রকাশ করেন। এই হতভাগ্য দেশে সেই ইংরাজের ঘর থেকে কি একটি মেয়েও আসেন না যিনি উক্ত বাহুল্য করুণরসের কিয়দংশ উপস্থিত ক্ষেত্রে ব্যয় করে মনােভার কিঞ্চিৎ লাঘব করে যেতে পারেন। বরঞ্চ পুরুষমানুষে দয়ার দৃষ্টান্ত দেখেছি, যেমন মহাত্মা ডেভিড হেয়ার। তিনি তাে আমাদের মুরুব্বি ছিলেন না, যথার্থই পিতা ছিলেন। কিন্তু তােমাদের মেয়েরা এখানে কেবল নাচগান করেন, সুযােগমতে বিবাহ করেন এবং কথােপকথনকালে সুচারু নাসিকার সুকুমার অগ্রভাগটুকু কুঞ্চিত করে আমাদের স্বজাতীয়ের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করেন। জানি না, কী অভিপ্রায়ে বিধাতা আমাদের ভারতবাসীকে তােমাদের ললনাদের স্নায়ুতন্ত্রের ঠিক উপযােগী করে সৃজন করেন নি’—!

 যাই হােক, স্বগত উক্তি যত ভালােই হােক স্টেজ ছাড়া আর কোথাও শ্রোতাদের কর্ণগােচর হয় না। তা ছাড়া, যে কথাগুলাে আক্ষেপবশতঃ মনের মধ্যে উদয় হয়েছিল সেগুলাে যে এই গোঁফওয়ালা পালােয়নের বিশেষ কিছু হৃদয়ঙ্গম হত এমন আমার বােধ হয় না। এ দিকে, বুদ্ধি যখন বেড়ে উঠল চোর তখন পালিয়েছে

১১৯