পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

মাঝে মাঝে জল দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তার ধারে গাছে চ’ড়ে দুটো খালি-পা ইটালিয়ান ছােকরা ফিগ পেড়ে খাচ্ছিল; আমাদের ডেকে ইশারায় জিজ্ঞাসা করলে, তােমরা খাবে কি? আমরা বললুম, না। খানিক বাদে দেখি তারা ফলবিশিষ্ট একটা ছিন্ন অলিভশাখা নিয়ে এসে উপস্থিত। জিজ্ঞাসা করলে, অলিভ খাবে? আমরা অসম্মত হলুম। তার পরে ইশারায় তামাক প্রার্থনা ক’রে বন্ধুর কাছ থেকে কিঞ্চিৎ তামাক আদায় করলে। তামাক খেতে খেতে দুজনে বরাবর আমাদের সঙ্গে সঙ্গে চলল। আমরা পরস্পরের ভাষা জানি নে আমাদের উভয় পক্ষে প্রবল অঙ্গভঙ্গীদ্বারা ভাবপ্রকাশ চলতে লাগল। জনশূন্য রাস্তা ক্রমশঃ উচ্চ হয়ে শস্যক্ষেত্রের মধ্যে দিয়ে বরাবর চলে গিয়েছে। কেবল মাঝে মাঝে এক-একটা ছোেটা বাড়ি, জানলার কাছে ফিগ-ফল শুকোতে দিয়েছে। এক-এক জায়গায় ছােটো ছােটো শাখাপথ বক্রগতিতে এক পাশ দিয়ে নেমে নীচে কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেছে।

 ফেরবার মুখে একটা গােরস্থানে ঢোকা গেল। এখানকার গাের নূতন রকমের দেখলুম। অধিকাংশ গােরের উপরে একএকটি ছােটো ঘর গেঁথেছে। সেই ঘর পর্দা দিয়ে, ছবি দিয়ে, রঙিন জিনিস দিয়ে, নানা রকমে সাজানাে; যেন মৃত্যুর একটা খেলাঘর— এর মধ্যে কেমন একটি ছেলেমানুষি আছে মৃত্যুটাকে যেন যথেষ্ট খাতির করা হচ্ছে না।

 গােরস্থানের এক জায়গায় সিঁড়ি দিয়ে একটা মাটির নীচেকার ঘরে নাবা গেল। সেখানে সহস্র সহস্র মড়ার মাথা অতি সুশৃঙ্খল ভাবে স্তূপাকারে সাজানাে। তৈমুর্‌লঙ বিশ্ববিজয় ক’রে একদিন এই রকম একটা উৎকট কৌতুকদৃশ্য দেখেছিলেন। আমার সঙ্গে সঙ্গেই নিশিদিন যে-একটা কঙ্কাল চলে বেড়াচ্ছে ঐ মুণ্ডগুলাে

১২৪