পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

চঞ্চলতার মধ্যে শ্রী নেই, প্রখরতার মধ্যে জ্যোতি নেই, এবং প্রৌঢ়তার সঙ্গে রমণীর মুখে যে-একটি স্নেহময় সুপ্রসন্ন সুগভীর মাতৃভাব পরিস্ফুট হয়ে ওঠে তাও তার কিছুমাত্র নেই। আমি এর ইতিহাস জানি নে— কিন্তু যে-সব রমণী চিত্তজয়ােৎসাহে মত্ত হয়ে উগ্র উত্তেজনায় জীবনের সমস্ত সহজ সুখের প্রতি অনেক পরিমাণে বীততৃষ্ণ হয়েছে তাদের বয়স্ক অবস্থা কী শূন্য এবং শােভাহীন! আমাদের মেয়েরা এই উদগ্র আমােদমদিরার আস্বাদ জানে না― তারা অল্পে অল্পে অতি সহজে স্ত্রী থেকে মা, এবং মা থেকে দিদিমা হয়ে আসে। পূর্বাবস্থা থেকে পরের অবস্থার মধ্যে প্রচণ্ড বিপ্লব বা বিচ্ছেদ নেই।

 ও দিকে আবার মিস অমুক এবং অমুককে দেখাে। কুমারীদ্বয় অবিশ্রাম পুরুষসমাজে কী খেলাই খেলাচ্ছে। আর কোনাে কাজ নেই, আর কোনাে ভাবনা নেই, আর কোনাে সুখ নেই― সচেতন পুত্তলিকা― মন নেই, আত্মা নেই, কেবল চোখে মুখে হাসি এবং কথা এবং উত্তর-প্রত্যুত্তর।

 ২৫ অক্টোবর। আজ সকাল বেলা স্নানের ঘর বন্ধ দেখে দরজার সামনে অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছি। কিছুক্ষণ বাদে বিরলকেশ পৃথুকলেবর দ্বিতীয় ব্যক্তি তােয়ালে এবং স্পঞ্জ্ হস্তে উপস্থিত। ঘর খালাস হবামাত্র সেই জন্‌বুল অম্লানবদনে প্রথমাগত আমাকে অতিক্রম করে ঘরে প্রবেশ করলে। প্রথমেই মনে হল তাকে ঠেলেঠুলে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ি; কিন্তু শারীরিক দ্বন্দ্বটা অত্যন্ত হীন এবং রূঢ় ব’লে মনে হয়, বেশ স্বাভাবিকরূপে আসে না। সুতরাং অধিকার ছেড়ে দিয়ে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে ভাবলুম নম্রতা গুণটা খুব ভালাে হতে পারে, কিন্তু খৃস্টজন্মের উনবিংশ শতাব্দী পরেও এই পৃথিবীর পক্ষে অনুপযােগী এবং দেখতে অনেকটা

১২৭