পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

ভীরুতার মতাে। নাওয়ার ঘরে প্রবেশ করতে যে খুব বেশি সাহসের আবশ্যক ছিল তা নয়, কিন্তু প্রাতঃকালেই এতটা মাংসবহুল কপিশবর্ণ পিঙ্গলচক্ষু রূঢ় ব্যক্তির সঙ্গে সংঘর্ষ-সম্ভাবনাটা কেমন সংকোচজনক মনে হল। স্বার্থপরতা অনেক সময় এই জন্যই জয়লাভ করে― বলিষ্ঠ ব’লে নয়, অতিমাংসগ্রস্ত কুৎসিত ব’লে।

 ২৬ অক্টোবর। জাহাজের একটা দিন বর্ণনা করা যাক।

 সকালে ডেক ধুয়ে গেছে, এখনাে ভিজে রয়েছে। দুই ধারে ডেক-চেয়ার বিশৃঙ্খলভাবে পরস্পরের উপর রাশীকৃত। খালি-পায়ে রাত-কাপড়-পরা পুরুষগণ কেউ বা বন্ধুসঙ্গে কেউ বা একলা মধ্যপথ দিয়ে হূহু করে বেড়াচ্ছে। ক্রমে যখন আটটা বাজল এবং একটিআধটি করে মেয়ে উপরে উঠতে লাগল তখন একে একে এই বিরলবেশ পুরুষদের অন্তর্ধান।

 স্নানের ঘরের সম্মুখে বিষম ভিড়! তিনটি মাত্র স্নানাগার; আমরা অনেকগুলি দ্বারস্থ। তােয়ালে এবং স্পঞ্জ্ হাতে দ্বারমােচনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি। দশ মিনিটের অধিক স্নানের ঘর অধিকার করবার নিয়ম নেই।

 স্নান এবং বেশভূষা সমাপনের পর উপরে গিয়ে দেখা যায় ডেকের উপর পদচারণশীল প্রভাতবায়ুসেবী অনেকগুলি স্ত্রীপুরুষের সমাগম হয়েছে। ঘন ঘন টুপি উদ্‌ঘাটন করে মহিলাদের এবং শিরঃকম্পে পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে শুভপ্রভাত অভিবাদন-পূর্বক গ্রীষ্মের তারতম্য সম্বন্ধে পরস্পরের মতামত ব্যক্ত করা গেল।

 নটার ঘণ্টা বাজল। ব্রেক্‌ফাস্ট্‌ প্রস্তুত। বুভুক্ষু নরনারীগণ সােপানপথ দিয়ে নিম্নকক্ষে ভােজনবিবরে প্রবেশ করলে। ডেকের উপরে আর জনপ্রাণী অবশিষ্ট রইল না। কেবল সারি-সারি শূন্যহৃদয় চৌকি ঊর্ধ্বমুখে প্রভুদের জন্যে অপেক্ষা করে রইল।

১২৮