পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

 ভােজনশালা প্রকাণ্ড ঘর। মাঝে দুই সার লম্বা টেবিল, এবং তার দুই পার্শ্বে খণ্ড খণ্ড ছোটো ছােটো টেবিল। আমরা দক্ষিণ পার্শ্বে একটি ক্ষুদ্র টেবিল অধিকার করে সাতটি প্রাণী দিনের মধ্যে তিনবার ক্ষুধানিবৃত্তি করে থাকি। মাংস রুটি ফলমূল মিষ্টান্ন মদিরায় এবং হাস্যকৌতুক গল্পগুজবে এই অনতি-উচ্চ সুপ্রশস্ত ঘর কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠে।

 আহারের পর উপরে গিয়ে যে যার নিজ নিজ চৌকি অম্বেষণ এবং যথাস্থানে স্থাপনে ব্যস্ত। চৌকি খুঁজে পাওয়া দায়। ডেক ধোবার সময় কার চৌকি কোথায় ফেলেছে তার ঠিক নেই।

 তার পর চৌকি খুঁজে নিয়ে আপনার জায়গাটুকু গুছিয়ে নেওয়া বিষম ব্যাপার। যেখানে একটু কোণ, যেখানে একটু বাতাস, যেখানে একটু রৌদ্রের তেজ কম, যেখানে যার অভ্যাস সেইখানে ঠেলেঠুলে, টেনেটুনে, পাশ কাটিয়ে, পথ করে আপনার চৌকিটি রাখতে পারলে সমস্ত দিনের মতো নিশ্চিন্ত।

 তার পরে দেখা যায় কোনাে চৌকিহারা ম্লানমুখী রমণী কাতরভাবে ইতস্ততঃ দৃষ্টিপাত করছে, কিন্তু কোনাে বিপদ্‌গ্রস্ত অবলা এই চৌকি-অরণ্যের মধ্যে থেকে নিজেরটি বিশ্লিষ্ট করে নিয়ে অভিপ্রেত স্থানে স্থাপন করতে পারছে না― তখন আমরা পুরুষগণ নারীসহায়ব্রতে চৌকি-উদ্ধারকার্যে নিযুক্ত হয়ে সুশিষ্ট ও সুমিষ্ট ধন্যবাদ অর্জন করে থাকি।

 তার পরে যে যার চৌকি অধিকার করে বসে যাওয়া যায়। ধূম্রসেবীগণ, হয় ধূম্রকক্ষে নয় ডেকের পশ্চাদ্ভাগে সমবেত হয়ে পরিতৃপ্ত মনে ধূমপান করছে। মেয়েরা অর্ধনিলীন অবস্থায় কেউবা নবেল পড়ছে, কেউ-বা শেলাই করছে; মাঝে মাঝে দুই-

১২৯