একবার অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে, কোথাও বা এক ধারে পাঁচসাত জন স্ত্রীপুরুষ এবং জাহাজের কর্মচারী জটলা করে উচ্চহাস্যে প্রমােদকল্লোল উচ্ছ্বসিত করে তুলছে। অলস পুরুষরা কেউ বা ব’সে কেউ বা দাঁড়িয়ে কেউ বা অর্ধশয়ান অবস্থায় চুরট খাচ্ছে, কেউ বা স্মােকিং সেলুনে কেউ বা নীচে খাবার ঘরে দুইস্কি-সােডা পাশে রেখে চার জনে দল বেঁধে বাজি রেখে তাস খেলছে। ও দিকে সংগীতশালায় সংগীতপ্রিয় দু-চার জনের সমাবেশ হয়ে গানবাজনা এবং মাঝে মাঝে করতালি শােনা যাচ্ছে।
ক্রমে সাড়ে-দশটা বাজে— মেয়েরা নেবে যায়, ডেকের উপরে আলাে হঠাৎ নিবে যায়, ডেক নিঃশব্দ নির্জন অন্ধকার হয়ে আসে, এবং চারি দিকে নিশীথের নিস্তব্ধতা চন্দ্রালােক এবং অনন্ত সমুদ্রের অশ্রান্ত কলধনি পরিস্ফুট হয়ে ওঠে।
২৭ অক্টোবর। লােহিত সমুদ্রের গরম ক্রমেই বেড়ে উঠছে। ডেকের উপর মেয়েরা সমস্ত দিন তৃষাতুরা হরিণীর মতাে ক্লিষ্ট কাতর হয়ে রয়েছে। তারা কেবল অতি ক্লান্তভাবে পাখা নাড়ছে, স্মেলিং সল্ট্ শুকছে, এবং সকরুণ যুবকেরা যখন পাশে এসে কুশল জিজ্ঞাসা করছে তখন নিমীলিত প্রায় নেত্রপল্লব ঈষৎ উন্মীলন করে ম্লানহায্যে কেবল গ্রীবাভঙ্গীদ্বারা আপন সুকুমার দেহলতার একান্ত অবসন্নতা ইঙ্গিতে জানাচ্ছে। যতই পরিপূর্ণ করে টিফিন এবং লেবুর শরবৎ খাচ্ছে ততই জড়ত্ব এবং ক্লান্তি বাড়ছে, নেত্র নিদ্রানত ও সর্বশরীর শিথিল হয়ে আসছে।
২৮ অক্টোবর। আজ এডেনে পৌঁছনাে গেল।
২৯ অক্টোবর। আমাদের জাহাজে একটি পার্সী সহযাত্রী আছে। তার ছুঁচোলাে ছাঁটা দাড়ি এবং বড়ো বড়ো চোখ সর্বপ্রথমেই চোখে পড়ে। অল্প বয়স। নয় মাস য়ুরােপে বেড়িয়ে বিলিতী পােশাক