পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

এবং চালচলন ধরেছে। বলে ইন্‌ডিয়া লাইক করে না। বলে, তার য়ুরােপীয় বন্ধুদের (অধিকাংশই স্ত্রীবন্ধু) কাছ থেকে তিনশাে চিঠি এসে তার কাছে জমেছে, তাই নিয়ে বেচারা মহা মুশকিলে পড়েছে— কখনই বা পড়বে, কখনই বা জবাব দেবে! লােকটা আবার নিজে বন্ধুত্ব করতে বড়োই নারাজ, কিন্তু বিধাতার বিড়ম্বনায় বন্ধুত্ব তার মাথার উপরে অনাহূত অযাচিত বর্ষিত হতে থাকে। সে বলে বন্ধুত্ব করে কোনাে ‘ফন’ নেই! উপরন্তু কেবল ল্যাঠা! এমনকি শত শত জর্মান ফরাসী ইটালিয়ান এবং ইংরেজ মেয়ের সঙ্গে সে ‘ফ্লার্ট্’ করে এসেছে কিন্তু তাতে কোনাে মজা পায় নি! একটা মেয়েকে কতকগুলাে মিথ্যে কথা বলা যায়, সে আদর করে পাখার বাড়ি মারে, এই তো ফ্লার্টেশন—এতে ‘ফন’ নেই! লোকটা পৃথিবীতে কিছুতেই যথেষ্ট মজা পাচ্ছে না, কিন্তু তার কাছ থেকে অন্য লােকে যে মজা উপভােগ করছে তা বােধ হয় সে স্বপ্নেও জানে না।

 ২ নভেম্বর। ভারতবর্ষের কাছাকাছি আসা গেছে। বােম্বাই পৌঁছবার কথা।

 আজ সুন্দর সকালবেলা। ঠাণ্ডা বাতাস ব’চ্ছে— সমুদ্র সফেন তরঙ্গে নৃত্য করছে, উজ্জ্বল রৌদ্র উঠেছে; কেউ ক্কয়ট্‌স্ খেলছে, কেউ নবেল পড়ছে, কেউ গল্প করছে; ম্যুজিক সেলুনে গান চলছে, স্মোকিং সেলুনে তাস চলছে, ডাইনিং সেলুনে খানার আয়ােজন হচ্ছে, এবং একটি সংকীর্ণ ক্যাবিনের মধ্যে আমাদের একটি বৃদ্ধ সহযাত্রী মরছে।

 সন্ধ্যা আটটার সময় ডিলন সাহেবের মৃত্যু হল। আজ সন্ধ্যার সময় একটি নাটক অভিনয় হবার কথা ছিল।

 ৩ নভেম্বর। সকালে অন্ত্যেষ্টি-অনুষ্ঠানের পর ডিলনের মৃতদেহ সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হল। আজ আমাদের সমুদ্রযাত্রার শেষ দিন।

১৩৩