পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি : খসড়া

হয়েও, অনেকগুলাে বিষয়ে নূতন সংবাদ না রেখেও, আমাদের কেবল কোমল হৃদয়টুকু নিয়ে মানবপরিবারের মধ্যে স্থান পাব। গােরাদের মােটা মােটা মুষ্টি, প্রচণ্ড দাপট এবং নিষ্ঠুর অসহিষ্ণুতা দেখে আপাতত সে দিন কল্পনা করা দুরূহ হয়ে পড়ে। আচ্ছা, নাহয় তাই হল, আমরা নাহয় এক পাশেই পড়ে রইলুম, Timesএর স্তম্ভে আমাদের নাম নাহয় নাই উঠল― আপনা-আপনি ভালােবেসেই কি যথেষ্ট সুখ পাব না?

 নিদেন আমি তাে আপনাকে তাই বােঝাচ্ছি। তােমরা কাজ করছ বােধ হয় ভালােই করছ— আমি পারি নে, আমার বিশ্বাস এবং উৎসাহ জাগে না, আমি কাছাকাছির মধ্যে ভালােবেসে যতটা পারি সুখে থাকি এবং যতটা পারি সুখে রাখি।

 কিন্তু দুঃখ আছে, দারিদ্র্য আছে, ক্ষমতার অত্যাচার আছে, অসহায়ের অপমান আছে, কোণে বসে ভালােবেসে তার কী করবে! হায়, ভারতবর্ষের সেই তাে দুঃসহ কষ্ট! আমরা কার সঙ্গে যুদ্ধ করব! রূঢ় মানবপ্রকৃতির চিরন্তন নিষ্ঠুরতার সঙ্গে! প্রবলতা চিরদিন দুর্বলতার প্রতি নির্মম, আমরা সেই আদিম পশুপ্রকৃতিকে কী করে জয় করব? সভা ক’রে? দরখাস্ত ক’রে? আজ একটু ভিক্ষে নিয়ে, কাল একটা লাঠি খেয়ে? তা কখনােই হবে না। প্রবলের সমান প্রবল হয়ে? তা হতে পারে বটে। কিন্তু যখন ভেবে দেখি য়ুরোপ কত দিকে প্রবল, কত কারণে প্রবল—যখন এই অসীম শক্তিকে একবার সর্বতােভাবে অনুভব করে দেখি— তখন কি আর আশা হয়? তখন মনে হয়, এসাে ভাই, সহিষ্ণু হয়ে থাকি, প্রবল হতে না পারি তবু ভালাে হবার চেষ্টা করি এবং ভালােবাসি।

 আমি যখন Matthew Arnoldএর কবিতা পড়ি তখন মনে ইয় য়ুরােপীয় সভ্যতার মধ্যে যতটুকু প্রাচীন হয়ে পড়েছে তারই যেন

১৪১