পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট

অনেক নূতন সুবিধে-অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু সবগুলিকে টেনে নিয়ে, নূতনকে এবং পুরাতনকে, সুবিধেকে এবং অসুবিধেকে সেই পিতামহপ্রতিষ্ঠিত এক ভিত্তির মধ্যে ভুক্ত করা হয়েছে; সামান্য অসুবিধের খাতিরে এরা কখনাে স্পর্ধিতভাবে নূতন গৃহবৃদ্ধি বা পুরাতন গৃহসংস্কার করে নি; যেখানে গৃহছাদের মধ্যে ছিদ্র হয়েছে সেখানে বটের শাখা অথবা কালসঞ্চিত মৃত্তিকাস্তরে ছায়া দান করেছে। এই মহা নগরারণ্য ভেঙে গেলে একটি বৃহৎ প্রাচীন শ্রান্ত জাতি একেবারে গৃহহীন― কেবল তাই নয়—একটি সহস্র বৎসরের প্রেতাত্মা এখানে যে চিরনিভৃত আশ্রয় গ্রহণ করেছিল সেও নিরাশ্রয়― তার আর-কোনাে ইতিহাস নেই, তার জন্মমৃত্যুর তারিখ নেই, সে কেবল এই প্রাচীন অধিবাসীদের ভগ্ন গৃহের মধ্যে বহুকাল আপন প্রাণহীন প্রাণ বহন করে আসছে। তােমরা হঠাৎ এসে বলছ― ওঠো, তােমরা জেগে ওঠো—এ-সমস্ত ভেঙেচুরে বদলে ফেলাে― ইতিমধ্যে পৃথিবীর অনেক পরিবর্তন হয়েছে এখন কর্মের যুগ পড়েছে, অমূলক চিন্তার সময় নেই। আমরা ভীত হয়ে তােমাদের বলছি এবং আপনাদের বােঝাবার চেষ্টা করছি— ঠিক কথা— মানবের উন্নতি-সাধনের জন্যে কর্ম আবশ্যক, কিন্তু এমন কর্মস্থান আর কোথায় আছে! দেখাে, এইখানেই মানব-ইতিহাসের প্রথম যুগে আর্য-বর্বরের যুদ্ধ হয়ে গেছে― এইখানে কত রাজ্যপত্তন কত নীতিধর্মের অভ্যুদয় কত সভ্যতার সংগ্রাম হয়ে গেছে, এই সমস্ত ভগ্নস্তুপের মধ্যে অনুসন্ধান করলে তার সহস্র চিহ্ন পাওয়া যাবে। অতএব আমাদের সমস্ত প্রস্তুত আছে, কিছুই করবার আবশ্যক নেই। তােমরা শুনে হাসছ, মনে করছ অনেক দিন নিদ্রামগ্ন থেকে ‘ছিল’ এবং ‘আছে’র মধ্যেকার প্রভেদ আমরা ভুলে গেছি— মধ্যে স্বহস্তে কিছু পরিবর্তন করি নি ব’লেই মনে করছি যা

১৪৪