পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট

কি জেনেছ তােমরা কী করছ? তােমরা কি জানাে তােমাদের উন্নতি তােমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? আমরা জানি আমরা কোথায় এসেছি, আমরা গৃহের মধ্যে অল্প অভাব এবং গাঢ় স্নেহ নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে আবদ্ধ হয়ে নিত্যনৈমিত্তিক ক্ষুদ্র নিকটকর্তব্যসকল পালন করে যাচ্ছি। আমাদের যতটুকু সুখসমৃদ্ধি আছে ধনী-দরিদ্রে, দূর ও নিকট সম্পর্কীয়ে, আত্মীয় অতিথি অনুচর ও ভিক্ষুকে মিলে ভাগ করে নিয়েছি; যথাসম্ভবমত লােক যথাসম্ভবমত সুখে কাটিয়ে দিচ্ছে― কেউ কাউকে ত্যাগ করতে চায় না। এবং জীবনঝঙ্কার তাড়নায় কেউ কাউকে ত্যাগ করতে বাধ্য হয় না। এই সহস্র সহস্র বৎসরে ভারতবর্ষ জীবনের এই এক মহৎ তত্ত্ব আবিষ্কার করেছে সুখের যথার্থ উপায় সন্তোষ— এবং সমস্ত সমাজনীতির দ্বারা ভারতের গৃহে গৃহে ও অন্তরে অন্তরে সেই সন্তোষ প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছে। যেটা খুঁজেছে সেটা পেয়েছে এবং সেটা দৃঢ়বদ্ধমূল করে দিয়েছে। তার আর-কিছু করবার নেই। সে বরঞ্চ তার বিশ্রামকক্ষে বসে তােমাদের উন্মাদ জীবন-উপপ্লব দেখে তােমাদের সভ্যতার সফলতা সম্বন্ধে সংশয় অনুভব করতে পারে। মনে করতে পারে, কালক্রমে অবশেষে তােমরা যখন একদিন কাজ বন্ধ করবে তখন কি এমন ধীরে এমন সহজে এমন বিশ্রামের মধ্যে অবতরণ করতে পারবে? আমাদের মতাে এমন কোমল এমন সহৃদয় পরিণতি লাভ করতে পারবে কি? উদ্দেশ্য যেমন ক্রমে ক্রমে লক্ষ্যের মধ্যে নিঃশেষিত হয়, উত্তপ্ত দিন যেমন অবশেষে সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ হয়ে অলক্ষ্যে সন্ধ্যার অন্ধকারের মধ্যে অবগাহন করে, সেই রকম মধুর সমাপ্তি লাভ করতে পারবে কি? না, কল যে রকম হঠাৎ বিগড়ে যায়, উত্তরােত্তর অতিরিক্ত বাষ্প ও তাপ সঞ্চয় ক’রে এঞ্জিন যে রকম সহসা ফেটে যায়, একপথবর্তী দুই

১৪৬