পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি : খসড়া

বিপরীতমুখী রেলগাড়ি পরস্পরের সংঘাতে যেমন অকস্মাৎ থেমে যায়, সেই রকম প্রবলবেগে একটা নিদারুণ অপখাতসমাপ্তি লাভ করবে? যাই হোক, তোমরা এখন অপরিচিত সমুদ্রে অনাবিষ্কৃত তটের সন্ধানে চলেছ। অতএব তোমাদের পথে তোমরা যাও, আমাদের গৃহে আমরা থাকি এই কথাই ভালো।

 কিন্তু গৃহরক্ষা হয় কী করে! যদি বাইরের কোনো উৎপাত থাকত তা হলে তো কোনো কথাই ছিল না। কিন্তু অজানা অচেনা লোক আমাদের এই নিভৃত নগরের মধ্যে প্রবেশ করেছে। আমাদের ইটগুলি খুলে, আমাদের গাছগুলো কেটে, তারা আপনাদের ঘর বানাতে চায়; বহু যত্নে আমাদের ছেলেদের মুখে যে অম্নের গ্লাসটি তুলে দিচ্ছি পরের ছেলের [জোয়ান গোঁয়ার] বাপগুলি এসে তা কেড়ে নিচ্ছে। এখন বিশ্রাম থাকে কোথায়? প্রাচীন হও আর শ্রান্ত হও আর নিজের প্রতি যে রকম স্তোকবাক্যই প্রয়োগ করো, আর প্রাচীন পুথি থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করে নিজেকে যতই সম্মান ও সমাদর করে, আহার তোত চাই, অপমান এবং দারিদ্র্য থেকে সন্তানদের রক্ষা করা তো চাই, যখন চার দিকে অসংযত বলের খেলা এবং নিষ্ঠুর জীবিকাসংগ্রাম তখন আত্মরক্ষার জন্যে সক্ষমতা লাভ করা তো চাই। এ কথা তো বললে চলবে না— 'আমরা প্রাচীন হয়েছি অতএব মরণ হলে দুঃখ নেই।

 আরও একটা কথা। সুখ বলে একটা জিনিস কিছুই নেই— সুখটিকে একটি দুর্লভ রত্নের মতো সংগ্রহ করে একটি কৌটোর মধ্যে পুরে ট্যাকের মধ্যে খুঁজে কেউ বলতে পারে না বা হয়ে গেল আমার আর কিছু করবার নেই। বিচিত্র মানবপ্রবৃত্তির চর্চাই সুখ। জীবনের প্রবাহই সুখ। অভাব যত অধিক, জীবিকা সংগ্রাম যত দুরূহ, সভ্যতা যত জটিল, মানবমনের বিচিত্র বৃত্তির

১৪৭