পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

প্রকাশক স্তম্ভে আমাদের নাম নাহয় নাই উঠল; আপনা-আপনি ভালোবেসেই কি যথেষ্ট সুখ পাব না?

 কিন্তু দুঃখ আছে, দারিদ্র্য আছে, প্রবলের অত্যাচার আছে, অসহায়ের ভাগ্যে অপমান আছে, কোণে বসে কেবল গৃহকর্ম এবং আতিথ্য করে তার কী প্রতিকার করবে?

 হায়, সেই তো ভারতবর্ষের দুঃসহ দুঃখ! আমরা কার সঙ্গে যুদ্ধ করব? রূঢ় মানবপ্রকৃতির চিরন্তন নিষ্ঠুরতার সঙ্গে। যিশু খৃস্টের পবিত্র শোণিতস্রোত যে অনুর্বর কাঠিন্যকে আজও কোমল করতে পারে নি সেই পাষাণের সঙ্গে! প্রবলতা চিরদিন দুর্বলতার প্রতি নির্মম, আমরা সেই আদিম পশুপ্রকৃতিকে কী করে জয় করব? সভা ক’রে? দরখাস্ত ক’রে? আজ একটু ভিক্ষা পেয়ে কাল একটা তাড়া খেয়ে? তা কখনোই হবে না।

 তবে, প্রবলের সমান প্রবল হয়ে? তা হতে পারে বটে। কিন্তু যখন ভেবে দেখি য়ুরোপ কতখানি প্রবল, কত দিকে প্রবল, কত কারণে প্রবল―যখন এই দুর্দান্ত শক্তিকে একবার কায়মনে সর্বতোভাবে অনুভব করে দেখি, তখন কি আর আশা হয়। তখন মনে হয়, এসো ভাই, সহিষ্ণু হয়ে থাকি এবং ভালোবাসি। পৃথিবীতে যতটুকু কাজ করি তা যেন সত্যসত্যই করি, ভাণ না করি। অক্ষমতার প্রধান বিপদ এই যে, সে বৃহৎ কাজ করতে পারে না বলে বৃহৎ ভাণকে শ্রেয়স্কর জ্ঞান করে। জানে না যে, মনুষ্যত্বলাভের পক্ষে বড়ো মিথ্যার চেয়ে ছোটো সত্য ঢের বেশি মূল্যবান।

 কিন্তু উপদেশ দেওয়া আমার অভিপ্রায় নয়। প্রকৃত অবস্থাটা কী তাই আমি দেখতে চেষ্টা করছি। তা দেখতে গেলে যে পুরাতন বেদ পুরাণ সংহিতা খুলে বসে নিজের মনের মতো শ্লোক সংগ্রহ