পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট

অনেক বিভীষিকা প্রচার করেছে। কিন্তু আমি যখন দাঁড়িয়ে দেখলুম এবং ভালাে করে ভাবলুম আজ আমার এই-যে মাথা ভাবছে এবং ভালােবাসছে কিছুদিন পরে সংসারের ঐ চিরবিস্মৃত অসীম স্তূপের মত ভুক্ত হতে পারে, তখন মনের মধ্যে এক রকম বিষণ্ণ বৈরাগ্য উদয় হল বটে, কিন্তু কিছুমাত্র ভয় হল না। ভাবলুম আর যাই হােক, ঐ সহস্র সহস্র মাথা অনিদ্রা দুশ্চিন্তা দুশ্চেষ্টা দুরাশা থেকে চিরদিনের মতাে আরােগ্য লাভ করেছে। তার সঙ্গে এও ভাবলুম, Rowlandএর ম্যাকাসার অয়েল পৃথিবীতে প্রতিদিন শিশি ভরে ভরে বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু কোনােকালে এদের তার এক ফোঁটা আবশ্যক হবে না― এবং দন্তমার্জনওয়ালারা যতই প্রচুর বিজ্ঞাপন প্রচার করুক না কেন, এই অসংখ্য অসংখ্য দন্তশ্রেণী তার কোন খোঁজ নেবে না।― শেষােক্ত চিন্তাটা প্রসঙ্গের উপযােগী গম্ভীর নয়, কিন্তু আমাদের চিন্তারাজ্যে জাতিভেদ এবং পৃথক আসনের প্রথা নেই। আমরা লেখবার সময়ে অনেক বিচার করে নির্বাচন করে লিখি, কিন্তু ভাববার সময় হযবরল করে ভাবি। আত্মা পরমাত্মা সম্বন্ধে তর্ক করতে করতে হঠাৎ মনে পড়ে অনেক ক্ষণ তামাক খাওয়া হয় নি, এবং যখন পিঠের ঠিক মাঝখানটা চুলকোচ্ছে এবং কিছুতেই নাগাল পাচ্ছি নে তখন প্রেয়সীর ভুবনমােহিনী মূর্তি মনে উদয় হওয়া কিছুই আশ্চর্য নয়।

 যাই হােক্‌গে, আপাততঃ আমার এই মাথার খুলিটার মধ্যে চিঠির প্রত্যাশা বিজ্‌বিজ্‌ করছে― যদি পাওয়া যায় তা হলে এই খুলির মধ্যে খুব খানিকটা খুশির উদয় হবে, যদি না পাওয়া যায় তা হলে ঐ অস্থিগহ্ব‌রের মধ্যে আজকের দিনের মতাে দুঃখ-নামক ভাবের সঞ্চার হবে, ঠিক মনে হবে আমি ভারী কষ্ট পাচ্ছি। এই মাথাটার পক্ষে গােটাকতক কথা-অঙ্কিত পত্রখণ্ডের কী এমন

২১৬