পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি : খসড়া

গুরুতর আবশ্যক কিছু বােঝবার যাে নেই। আজ চিঠি না পাওয়ার দরুন সেদিনকার মহানিদ্রার কি কিছু ব্যাঘাত ঘটবে? সেদিন ইচ্ছানিরপেক্ষ যে চিরবিশ্রাম জুটবে আজ তার ছায়ামাত্র পেলে বেঁচে যাই। ‘মরণ হলে ঘুমিয়ে বাঁচি’ কথাটার মধ্যে মানবজীবনের অনেক বেদনা ব্যক্ত হয়েছে। এই fever of lifeএ দীর্ঘ রাত্রিদিন কেবল এপাশ ওপাশ করা যাচ্ছে— ঘুম আর আসে না।

 রাত্রি সাড়ে-দশটা পর্যন্ত চিঠির জন্যে অপেক্ষা করে জানতে পারলুম চিঠি পাওয়া যাবে না। চিঠি আমার পিছনে পিছনে কলকাতায় যাত্রা করবে। দূর হােক্‌গে, শুতে যাওয়া যাক। ঘুম আসছে, এমন সময় লােকেন আর সল্লির চিঠি পেলুম। টফি লেগে সল্লির চিঠির আর্ধেক পড়া গেল না। লােকেন লিখছে ছোটো বউয়ের চিঠি পাঠিয়েছে, কিন্তু পেলুম না।

 সােমবার [২০ অক্‌টোবর]। সমস্ত দিন seasick— অসহ্য যন্ত্রণা। কিচ্ছু খাই নি।

 মঙ্গল [২১ অক্‌টোবর]। উঠে একটু breakfast করেছি, আজ ভালাে বােধ হচ্ছে। আমি আমার কোণে চুপ করে বসে থাকি— Miss Long যতবার আমার সমুখ দিয়ে চলে যায় আমার মুখের দিকে চেয়ে একটু হেসে যায়, আমিও হাসি; মনে হয় এর পরে উঠে গিয়ে তার সঙ্গে একটু আলাপ না করা rude হয়ে পড়ছে, কিন্তু কিছুতে হয়ে ওঠে না। আজ সন্ধের সময় পাশে দাঁড়িয়ে দুএকটা কথা বললুম। বললুম: It was unkind of you Miss Long to look so aggressively well yesterday while we were all so miserable। Miss Long বললে: I was awfully sorry for you, you looked so bad। তার পরে অনেক গল্প হল। আজ সন্ধের সময় আবার এক-চোট নৃত্য হয়ে

২১৭