পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পবিশিষ্ট

সর্বদা কোমল ও সরস করে রাখে, সভা কিম্বা কুকুরশাবকের দ্বারা সমস্ত শূন্য জীবনকে ব্যাপৃত রাখবার আবশ্যক হয় না। আমার মনে হয়, সভ্যতার আকর্ষণে ইয়ুরােপীয় মেয়েরা এতদূর বেরিয়ে এসেছে যে, তাদের কেন্দ্র থেকে ছিন্ন হয়ে কক্ষের বাহির হয়ে পড়েছে। তারা প্রমােদের পাকেই ঘূর্ণ্যমান হােক, কিম্বা কার্যক্ষেত্রে পুরুষদের সঙ্গে জীবনসংগ্রামে প্রবৃত্ত হােক, কিম্বা বিজনে কৌমার্য বা বৈধব্য -যাপন করুক, তাদের স্ত্রীপ্রকৃতির মধ্যে শান্তি নেই। হয় তারা প্রমােদে উন্মত্ত, নয় তারা আন্তরিক অসন্তোষে আক্রান্ত। আর যাই হোক, আমাদের ব্যক্তিগত ও জাতীয় উন্নতির পক্ষে যতই ব্যাঘাতজনক হােক, আমাদের বৃহৎ পরিবার মেয়েদের পক্ষে একান্ত উপযােগী। কারণ, ভালােবাসাহীন শূন্য স্বাধীনতা নারীর পক্ষে অতি ভয়ানক, মরুভূমির স্বাধীনতা গৃহপ্রিয় লােকের পক্ষে যেমন নিদারুণ শূন্য। আমরা যাকে বন্ধন মনে করি মেয়েদের পক্ষে তা বন্ধন নয়। অবিশ্যি, সুখদুঃখ পুরুষদের মতাে মেয়েদের জীবনেও আছে—পুরুষদের অগত্যাকাজ যেমন কঠিন, ভালােবাসার কর্তব্যও তেমনি সকল সময়ে লঘু নয়। ভালােবাসারও অনেক দায়, অনেক বালাই আছে। কিন্তু ভালােবাসার ত্যাগস্বীকার অনেক সহজ― আমার পক্ষে বন্ধুর নিমন্ত্রণ রক্ষা না ক’রে চাপকান প’রে আপিসে যাওয়া যত কঠিন, মায়ের পক্ষে সন্তানের অনুরােধে নিমন্ত্রণ অগ্রাহ্য করা তত কঠিন নয়। এই জন্যে মেয়েদের জীবন পুরুষের চক্ষে যত কঠিন ঠেকে মেয়েদের পক্ষে ততটা নয়। তাদের নিভৃত সুখদুঃখের মধ্যে থেকে উৎপাটন করে তাদের বাইরে এনে দাও, তারা কখনােই সুখী হবে না। আমাদের মেয়েরা যে ইংরেজ মেয়েদের চেয়ে অসুখী বা নির্বোধ বা অশিক্ষিত তা নয়। আপন সীমানার বাইরে তারা নির্বোধ শঙ্কিত সংকুচিত— বাইরে নিয়ে গেলে তারা জানে

২৩৬