পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট

এবং বর্তমান বিদুষীমণ্ডলীর বিদ্রোহ করবার কোনাে কারণ থাকত না। আমরা মাটি কামড়ে কোনােমতে ঘরের প্রাঙ্গণটিতে পড়ে থাকি, আমাদের মেয়েরা সেই ঘরের অন্তঃপুরে বিরাজ করে। তােমরা পুচ্ছ-আস্ফালনে সমস্ত সংসার ঘােলা করে বেড়াও, তােমাদের মেয়েরা তােমাদের অনুবর্তী। কিন্তু এখনও তােমরা পুরুষরাই প্রধান, তােমরাই প্রভু― তােমাদের স্ত্রীরা অনুগত ছায়া। তােমাদের তুলনায় তােমাদের স্ত্রীরা অশিক্ষিত।

 বিধবাবিবাহ না থাকাতে আমাদের সমাজে স্ত্রীলােকদের অত্যন্ত কষ্ট? তােমাদের দেশে কুমারীবিবাহ বন্ধ হয়ে সমাজে যত অনাথা স্ত্রীলােকের আবির্ভাব হয়েছে আমাদের দেশে বিধবাবিবাহ বন্ধ হয়ে তত হয় নি। সমাজের মঙ্গলের প্রতি যদি লক্ষ করা যায় তবে আমাদের দেশে বিধবাবিবাহ অসম্ভব, তােমাদের দেশে অবস্থা বিশেষে বিধবাবিবাহ আবশ্যক। সকল সমাজনিয়মই আপেক্ষিক। আমাদের সমাজ তােমরা কিছুমাত্র জানাে না, এই জন্য আমাদের সমাজ সম্বন্ধে তােমরা কিছুই বুঝতে পারাে না।

 যেমন লােকভেদে তেমনি জাতিভেদে সুখদুঃখ বিভিন্ন। আমি যখন গাজিপুরে থাকতুম তখন ইংরেজরা মনে করত, আমােদ প্রমােদ খেলা ও সঙ্গ অভাবে আমি বুঝি ভারী ম্রিয়মাণ হয়ে আছি। তাই আমাকে ক্রমাগত নিমন্ত্রণ করত এবং ক্লাবের মেম্বর হবার জন্যে অনুরােধ করত। আমি যে আমার ঘরের কোণে সন্ধেবেলা আলােটি জ্বেলে আমার আপনার লােক নিয়ে কত সুখে থাকতুম তা তারা বুঝতে পারত না। একজন Lady Dufferin -মেয়ে-ডাক্তার আমাদের অন্তঃপুরে প্রবেশ করে যখন দেখে অপরিষ্কার ছােটো ঘর, ছােটো জানলা, ময়লা বিছানা, মাটির প্রদীপ, দড়িবাঁধা মশারি, আর্ট্ স্টুডিয়াের রঙ-লেপা ছবি, তখন সে মনে করে— কী সর্বনাশ!

২৩৮