পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট : য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

করে। মনে করছি যতদিন না জাহাজ ছাড়ব আর স্নান করব না। ইউরােপে পৌঁছতে এখনাে হপ্তাখানেক আছে— একবার সেইখানে পৌঁছে ডাঙায় পা দিয়ে বাঁচি। এই দিন-রাত্রি সমুদ্র আর ভালাে লাগে না। আজকাল যদিও সমুদ্রটা বেশ ঠাণ্ডা হয়েছে, জাহাজ তেমন দুলছে না, শরীরেও কোনাে অসুখ নেই―সমস্ত দিন জাহাজের ছাতের উপরে একটা মস্ত কেদারায় উপরে প’ড়ে হয় লােকেনের সঙ্গে গল্প করি নয় ভাবি, নয় বই পড়ি। রাত্তিরেও ছাতের উপরে বিছানা করে শুই, পারৎপক্ষে ঘরের ভিতরে ঢুকি নে। ঘরের মধ্যে গেলেই গা কেমন করে ওঠে। কাল রাত্তিরে আবার হঠাৎ খুব বৃষ্টি এল— যেখানে বৃষ্টির ছাঁট নেই সেইখানে বিছানাটা টেনে নিয়ে যেতে হল। সেই অবধি এখন পর্যন্ত ক্রমাগতই বৃষ্টি চলছে। কাল বেড়ে রোদ্‌দুর ছিল। আমাদের জাহাজে দুটো-তিনটে ছােটো ছটো মেয়ে আছে—তাদের মা মরে গেছে, বাপের সঙ্গে বিলেত যাচ্ছে। বেচারাদের দেখে আমার বড়াে মায়া করে। তাদের বাপটা সর্বদা তাদের কাছে কাছে নিয়ে বেড়াচ্ছে— ভালাে করে কাপড়-চোপড় পরাতে পারে না, জানে না কিরকম করে কী করতে হয়। তারা বৃষ্টিতে বেড়াচ্ছে, বাপ এসে বারণ করলে, তারা বললে আমাদের বৃষ্টিতে বেড়াতে বেশ লাগে’— বাপটা একটু হাসে, বেশ আমােদে খেলা করছে দেখে বারণ করতে বােধ [হয়] মন সরে না। তাদের দেখে আমার নিজের বাচ্ছাদের মনে পড়ে। কাল রাত্তিরে বেলিটাকে স্বপ্নে দেখেছিলুম— সে যেন স্টী‌মারে এসেছে তাকে এমনি চমৎকার ভালাে দেখাচ্ছে সে আর কী বলব— দেশে ফেরবার সময় বাচ্ছাদের জন্যে কিরকম জিনিস নিয়ে যাব বলো দেখি। এ চিঠিটা পেয়েই যদি একটা উত্তর দাও তা হলে বােধ

২৫০