পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট : য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

আসছে—খুব বেশি নয়—কিন্তু যখন ডেকে বসে থাকি এবং জোরে বাতাস দেয় তখন একটু শীত-শীত করে। অল্পস্বল্প গরম কাপড় পরতে আরম্ভ করেছি। আজকাল রাত্তিরে ডেকে শােওয়াটাও ছেড়ে দিতে হয়েছে। জাহাজের ছাতে শুয়ে লােকেনের দাঁতের গােড়া ফুলে ভারী অস্থির করে তুলেছিল। আমরা যে সময়ে এসেছি নিতান্ত অল্প শীত পাব— দার্জিলিঙে যে রকম শীত ছিল তার চেয়ে ঢের কম। ছাড়বার সময়-সময় একটু শীত হবে হয়তাে। আমি অনেকগুলাে অদরকারী কাপড়-চোপড় এবং সেই বালাপােষখানা মেজবােঠানের হাত দিয়ে তােমাকে পাঠিয়ে দিয়েছি― সেগুলাে পেয়েছ তো? না পেয়ে থাক তো চেয়ে নিয়ে। সেগুলাে একবার লক্ষ্মীর হাতে পড়লে সমস্ত মেজবােঠানের আলমারির মধ্যে প্রবেশ করবে। বেলির জন্যে আমি একটা কাপড় আর পাড় কিনে মেজবােঠানদের সঙ্গে পাঠিয়েছি— সেটা এতদিনে অবিশ্যি পেয়েছ— খুব টুক টুকে লাল কাপড়— বােধ হয় বেলিবুড়িকে তাতে বেশ মানাবে— পাড়টাও বেশ নতুন রকমের— না? মেজবােঠানও বেলির জন্যে তার একটা প্রাইজের কাপড় নিয়েছেন— নীলেতে শাদাতে—সেটাও বেলুরানুকে বেশ মানাবে। সেটা যে রকমের ভাবুনে, নতুন কাপড় পেয়ে বােধ হয় খুব খুশী হয়েছে। আমাকে কি সে মনে করে? খােকাকে ফিরে গিয়ে কিরকম দেখব কে জানে। ততদিনে সে বােধ হয় দুটো-চারটে কথা কইতে পারবে। আমাকে নিশ্চয় চিনতে পারবে না। হয়তাে এমন ঘাের সাহেব হয়ে আসব তােমরাই চিনতে পারবে না। আমার সেই আঙুল কেটে গিয়েছিল, এখন সেরে গেছে, কিন্তু খুব দুটো গর্ত হয়ে আছে— ভয়ানক কেটে গিয়েছিল। অনেক দিন বাদে কাল-পরশু দুদিন স্নান করেছি— আবার পরশু দিন প্যারিসে পৌঁছে নাবার বন্দোবস্ত

২৫২