পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রাসঙ্গিক সংকলন

সে দুটো খুব উঁচু জিনিস।’

 আমি বৈলাতিক কর্মশীলতার বিরুদ্ধে উপদেশ দিতেছি না। আমি নিজের কথা বলিতেছি। আমার পক্ষে বাংলাদেশের এই আকাশ-ভরা আলাে, এই দক্ষিণের বাতাস, এই গঙ্গার প্রবাহ, এই রাজকীয় আলস্য, এই আকাশের নীল ও পৃথিবীর সবুজের মাঝখানকার দিগন্তপ্রসারিত উদার অবকাশের মধ্যে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ— তৃষ্ণার জল ও ক্ষুধার অন্নের মতোই আবশ্যক ছিল। যদিও খুব বেশিদিনের কথা নহে তবু ইতিমধ্যে সময়ের অনেক পরিবর্তন হইয়া গেছে। আমাদের তরুছায়াপ্রচ্ছন্ন, গঙ্গাতটের নীড়গুলির মধ্যে কলকারখানা ঊর্ধ্বফণা সাপের মধ্যে প্রবেশ করিয়া সোঁ সোঁ শব্দে কালাে নিশ্বাস ফুঁসিতেছে। এখন খরমধ্যাহ্নে আমাদের মনের মধ্যেও বাংলাদেশের স্নিগ্ধচ্ছায়া খর্বতম হইয়া আসিয়াছে— এখন দেশে কোথাও অবসর নাই। হয়তাে সে ভালােই, কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন ভালাে এমন কথাও জোর করিয়া বলিবার সময় হয় নাই।

 বিলাত হইতে ফিরিয়া আসিবার পরবর্তী জীবন সম্বন্ধে আরএকখানি পুরাতন চিঠি হইতে উদ্‌ধৃত করিয়া দিই—

 ‘যৌবনের আরম্ভ-সময়ে বাংলাদেশে ফিরে এলেম। সেই ছাদ, সেই চাঁদ, সেই দক্ষিনে বাতাস, সেই নিজের মনের বিজন স্বপ্ন, সেই ধীরে ধীরে ক্রমে ক্রমে চারি দিক থেকে প্রসারিত সহস্র বন্ধন, সেই সুদীর্ঘ অবসর, কর্মহীন কল্পনা, আপন-মনে সৌন্দর্যের মরীচিকা-রচনা, নিষ্ফল দুরাশা, অন্তরের নিগূঢ় বেদনা, আত্মপীড়ক অলস কবিত্ব—এই-সমস্ত নাগপাশের দ্বারা জড়িত বেষ্টিত হয়ে চুপ করে পড়ে আছি। আজ আমার চার দিকে নবজীবনের প্রবলতা ও চঞ্চলতা দেখে মনে হচ্ছে আমারও হয়তাে এ রকম

২৫৭