পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট : য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

হতে পারত। কিন্তু আমরা সেই বহুকাল পূর্বে জন্মেছিলেম তিনজন বালক― তখন পৃথিবী আর-এক রকম ছিল। এখনকার চেয়ে অনেক বেশি অশিক্ষিত, সরল, অনেক বেশি কাঁচা ছিল। পৃথিবী আজকালকার ছেলের কাছে Kindergartenএর কর্ত্রীর মতো―কোনাে ভুল খবর দেয় না, পদে পদে সত্যকার শিক্ষাই দেয়― কিন্তু আমাদের সময়ে সে ছেলে ভােলাবার গল্প বলত, নানা অদ্ভুত সংস্কার জন্মিয়ে দিত, এবং চারি দিকের গাছপালা প্রকৃতির মুখশ্রী কোনাে-এক প্রাচীন বিধাতৃমাতার বৃহৎ রূপকথা-রচনারই মতাে বােধ হত; নীতিকথা বিজ্ঞানপাঠ বলে ভ্রম হত না।’

 এই উপলক্ষ্যে এখানে আর-একটি চিঠি[১] উদ্‌ধৃত করিয়া দিব। এ চিঠি অনেক দিন পরে আমার ৩২ বছর বয়সে গােরাই নদী হইতে লেখা, কিন্তু দেখিতেছি সুর সেই একই রকমের আছে। এই চিঠিগুলিতে পত্রলেখকের অকৃত্রিম আত্মপরিচয়, অন্তত বিশেষ সময়ের বিশেষ মনের ভাব প্রকাশ পাইবে। ইহার মধ্যে যে ভাবটুকু আছে তাহা পাঠকদের পক্ষে যদি অহিতকর হয় তবে তাঁহারা সাবধান হইবেন; এখানে আমি শিক্ষকতা করিতেছি না।

 ‘আমি প্রায় রোজই মনে করি, এই তারাময় আকাশের নীচে আবার কি কখনো জন্মগ্রহণ করব। যদি করি আর কি কখনাে এমন প্রশান্ত সন্ধ্যাবেলায় এই নিস্তব্ধ গােরাই নদীটির উপরে বাংলাদেশের এই সুন্দর একটি কোণে এমন নিশ্চিন্ত মুগ্ধ মনে··· পড়ে থাকতে পারব? হয়তাে আর-কোনাে জন্মে এমন একটি সন্ধেবেলা আর কখনাে ফিরে পাব না। তখন কোথায় দৃশ্য-


২৫৮
  1. ছিন্নপত্র। ১৬ মে ১৮৯৩ তারিখের চিঠি।