পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

এসে পড়েছি এখানে প্রাণ এবং মান রক্ষা করতে হলে সর্বদা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আচার বিচার নিয়ে খুঁত খুঁত ক’রে, বসনের অগ্রভাগটি তুলে ধরে, নাসিকার অগ্রভাগটুকু কুঞ্চিত ক’রে, একান্ত সন্তর্পণে পৃথিবীতে চলে বেড়ালে চলবে না— যেন এই বিশাল বিশ্বসংসার একটা পঙ্ককুণ্ড, শ্রাবণ মাসের কাঁচা রাস্তা, আর্যজনের কমলচরণতলের অযােগ্য। এখন যদি প্রতিষ্ঠা চাও তো চিত্তের উদার প্রসারতা, সর্বাঙ্গীণ নিরাময় সুস্থভাব, শরীর ও বুদ্ধির বলিষ্ঠতা, জ্ঞানের বিস্তার, এবং বিশ্রামহীন তৎপরতা চাই।

 সাধারণ পৃথিবীর স্পর্শ সযত্নে পরিহার করে মহামান্স আপনাটিকে সর্বদা ধুয়ে-মেজে ঢেকেঢুকে অন্য-সমস্তকে ইতর আখ্যা দিয়ে ঘৃণা ক’রে আমরা যে রকম ভাবে চলেছিলুম তাকে আধ্যাত্মিক বাবুয়ানা বলে— এই রকম অতিবিলাসিতায় মনুষ্যত্ব ক্রমে অকর্মণ্য ও বন্ধ্যা হয়ে আসে।

 জড় পদার্থকেই কাঁচের আবরণের মধ্যে ঢেকে রাখা যায়। জীবকেও যদি অত্যন্ত পরিষ্কার রাখবার জন্য নির্মল স্ফটিক -আচ্ছাদনের মধ্যে রাখা যায় তা হলে ধূলি রােধ করা হয় বটে, কিন্তু সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যও রােধ করা হয়, মলিনতা এবং জীবন দুটোকেই যথাসম্ভব হ্রাস করে দেওয়া হয়।

 আমাদের পণ্ডিতেরা বলে থাকেন আমরা যে একটি আশ্চর্য আর্য পবিত্রতা লাভ করেছি তা বহু সাধনার ধন, তা অতি যত্নে রক্ষা করবার যােগ্য; সেইজন্যই আমরা ম্লেচ্ছ যবনদের সংস্পর্শ সর্বতােভাবে পরিত্যাগ করতে চেষ্টা করে থাকি।

 এ সম্বন্ধে দুটি কথা বলবার আছে। প্রথমত, আমরা সকলেই যে বিশেষরূপে পবিত্রতার চর্চা করে থাকি তা নয়, অথচ অধিকাংশ মানবজাতিকে অপবিত্র জ্ঞান করে একটা সম্পূর্ণ অন্যায় বিচার,

১৯