পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

চলৎশক্তিরহিত অতি নিরীহ পােষা প্রাণীর সৃষ্টি হয়, জীবস্বভাবের বৈচিত্র্য একেবারে লােপ হয়, দেখে বােধ হয় ভগবান এই পৃথিবীকে একটা প্রকাণ্ড পিঞ্জররূপে নির্মাণ করেছেন― জীবের আবাসভূমি করেন নি।

 কিন্তু সমাজের যে-সকল প্রাচীন ধাত্রী আছেন তাঁরা মনে করেন সুস্থ ছেলে দুরন্ত হয়, এবং দুরন্ত ছেলে কখনাে কাঁদে, কখনাে ছুটোছুটি করে, কখনাে বাইরে যেতে চায়, তাকে নিয়ে বিষম ঝঞ্ঝাট, অতএব তার মুখে কিঞ্চিং অহিফেন দিয়ে তাকে যদি মৃতপ্রায় করে রাখা যায় তা হলেই বেশ নির্ভাবনায় গৃহকার্য করা যেতে পারে।

 বালিকাকে যদি কিশােরী করে বিবাহ দেওয়া যায় তবে তার অনেক বিপদ, বালককে যদি যৌবনকাল পর্যন্ত অবিবাহিত রাখা যায় তবে তার অনেক আশঙ্কা, জ্ঞানশিক্ষার দ্বারা স্ত্রীলােকদের যদি চিত্তস্ফূর্তির উপায় করে দিতে হয় তবে তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক বিস্তর ভাবনা। তার চেয়ে বালক-বালিকার বিবাহ দিয়ে, স্ত্রীলোেকদের অশিক্ষিত রেখে, অনেক সতর্কতা সংযম এবং পরিশ্রমের হাত এড়ানাে যেতে পারে।

 তা ছাড়া, স্ত্রীলােকদের লেখাপড়া শেখাবার আবশ্যক কী? লেখাপড়া না শিখে তারা কি এতকাল ঘরকন্নার কাজ চালায় নি? তাদের যে কাজ তাতে সম্পূর্ণ চিত্তবিকাশের কোনাে প্রয়ােজন করে না। রন্ধনকার্যে রসায়নবিদ্যা যে অত্যাবশ্যক তা বলা যায় না, এবং গর্ভধারণে তীক্ষ্ণ চিন্তাশক্তি কোনাে সহায়তা করে না।

 বিশেষতঃ যদি স্ত্রীলােক হঠাৎ জানতে পায় বাসুকীর মাথার উপর পৃথিবী নেই, পৃথিবী সূর্যের চারি দিকে প্রদক্ষিণ করছে, তা হলে কি আর স্ত্রীচরিত্রের কমনীয়তা রক্ষা হবে, এবং স্ত্রীলােক

২৪