পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

প্র্যাক্‌টিকাল হয় নি; সমালোচনা এবং প্রতিবাদ করা ছাড়া সাধারণে একে আর-কোনো ব্যবহারে আনতে পারবেন না। কিন্তু সেটা আমাদের বংশাবলীর ধারা। ভগবান শাণ্ডিল্য এবং তাঁর সমসাময়িক পিতামহগণ কেউ প্র্যাক্‌টিকাল ছিলেন না। তাঁরা হোমানলে যে পরিমাণে অজস্র ঘৃত ব্যয় করেছেন সে খরচটা কি বর্তমান সভ্যতার কোনো হিসাবী লোক প্র্যাক্‌টিকাল শিরে লিখতে পারেন?

 অবশ্য, তাঁদের সময়েও প্র্যাক্‌টিকাল এবং অপ্র্যাক্‌টিকালের একটা সীমা নির্দিষ্ট ছিল। ভস্মে ঘৃত ঢালাটা তাঁদের কালের বিষয়বুদ্ধিতেও নিতান্ত অপব্যয় বলে বোধ হত। কিন্তু অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দিলে সহসা যে-একটি লৌকিক প্রভাবসম্পন্ন দীপ্তিমান পরমরমণীয় শিখার উদ্ভব হয় সেটাকে তখনকার কালের প্র্যাক্‌টিকাল লোকেরা একটা ফললাভস্বরূপ গণ্য করতেন।

 যুনোপীয় বিজ্ঞসমাজে যে-কোনো তত্ত্ব আবিষ্কার হোক-না কেন, তৎক্ষণাৎ পাঁচজনে প’ড়ে তার উপরে সহস্র পেয়াদা লাগিয়ে, সেটাকে ধরে বেঁধে, নির্যাতন ক’রে, কখনো বা তার ঘর ভেঙে দিয়ে, কখনো বা তাকে কারারুদ্ধ ক’রে, তার যথাসর্বস্ব আদায় করে নিয়ে তবে ছাড়েন; তার বসনাঞ্চল ঝাড়া দিয়ে ভূরিভূরি প্র্যাক্‌টিক্যাল ফল বাহির করেন। তাঁরা মন্ত্র পড়ে এই বিশ্বের মধ্যে থেকে যে ষাট-সত্তরটি ভূত নামিয়েছেন তাদের দিয়ে অহর্নিশি ভূতের বেগার খাটিয়ে নেন।

 আমাদের পূর্বপুরুষগণও সৃষ্টির অনেক তত্ত্ব আবিষ্কার করে গেছেন। কিন্তু সত্ত্ব রজ তম নিয়ে কারও ধুয়ে খাবার যো নেই; যে পাঁচটি ভূতের সন্ধান পেয়েছেন তাদের দ্বারা সময়ে অসময়ে কোন-যে একটা বিশেষ ফল পাওয়া যাবে এমন সম্ভাবনা

৩৩