দেখি নে। অতএব যাঁরা কৌলিক স্বভাবের নিয়ম মানেন তাঁরা আমার এই প্র্যাক্টিকাল ভাবের অভাব দেখে দুঃখিত হবেন সন্দেহ নেই, কিন্তু বিস্মিত হবেন না।
তার পরে আবার আমরা বাঙালিরা অধিকাংশই চিন্তাশীল এবং দুর্ভাগ্যক্রমে ‘স্বাধীন’চিন্তাশীল। স্বাধীন চিন্তার অর্থ এই― যে চিন্তার কোনো অবলম্বন নেই; যার জন্যে কোনো বিশেষ শিক্ষা বা সন্ধান, প্রমাণ বা দৃষ্টান্তের কোনো আবশ্যক করে না। আর সকল প্রকার অপবাদই আমাদের সহ্য হয়, কিন্তু চিন্তা সম্বন্ধে কারও সাহায্য গ্রহণ করেছি এ অপবাদ অসহ্য। স্ত্রীলোকদের ন্যায় আমাদের অশিক্ষিতপটুত্ব। প্রচলিত বিজ্ঞানশাস্ত্রের সঙ্গে যতই অনৈক্য হবে আমাদের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও ততই স্বাধীনচিন্তাসম্পন্ন বলে সমাদৃত হবে; এবং যতই আমরা অধিক চক্ষু মুদ্রিত করতে পারব, দর্শনশাস্ত্র সম্বন্ধে ততই আমাদের সমধিক পারদর্শিতা লাভ হবে।
আমিও এই রকম স্বাধীন চিন্তা ভালোবাসি বলে আমার লেখা প্র্যাক্টিকাল হয় না। আমাদের চিন্তাশীলগণ কোন্-এক অপূর্ব তপস্যাবলে স্বর্গ মর্ত উভয়েরই অতীত এক স্বতন্ত্র স্বাধীন লোক লাভ করেছেন; সেই আশমানপুরীর সব চেয়ে সৃষ্টিছাড়া একটা কোণ আশ্রয় করে আমি পড়ে থাকি। তবু এখানকার অনেকেই স্বমনঃকল্পিত দর্শন বিজ্ঞানের সৃষ্টি ক’রে এবং স্বগৃহরচিত পলিটিক্স্ চর্চা করে এই নিরাধার চিন্তাজগতের উন্নতিবিধানের চেষ্টা করে থাকেন। কিন্তু আমি এমনি হতভাগ্য যে এখানকার লোকেরাও আমার নামে অভিযোগ করে থাকেন যে, আমার দ্বারা কোনো প্র্যাক্টিকাল কাজ হচ্ছে না, কেবল আমি রাশি রাশি বাষ্প রচনা করে দেশের বীর্য বল বুদ্ধি আচ্ছন্ন করে দিচ্ছি।