পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

 আমি চিহ্নিত অপরাধী। আমি আমার অপরাধ স্বীকার করে থাকি। অস্মদ্দেশের সকলেই স্বাধীন চিন্তা করে থাকেন, আমিও তাই করি; কিন্তু আমি যে-সকল বিষয় নিয়ে আলােচনা করি তাতে চিন্তার স্বাধীনতার কোনাে গৌরব নেই। এই, জগতের গাছটা-পালাটার কম্পন কিম্বা মর্মর, কিম্বা মলয়বাতাসের হিল্লোল, কি বড়ো বাড়াবাড়ি হল তাে কৃষ্ণনয়ন এবং মিষ্ট হাস্য― এই নিয়ে নিজের মনে বসে জাল বােনা এবং নিজের জালে নিজে জড়িয়ে থাকা এটা বড় বেশি কথা হল না। কিন্তু মানবতত্ত্ব সমাজতত্ত্ব ধর্মতত্ত্ব ইতিহাস এবং পলিটিক্‌স যদি সম্পূর্ণ নিজের মন থেকে গড়ে তুলতে পারা যায়, তা হলেই একটা দুরূহ কাজ করা হয় বটে এবং আমরা যে ত্রিশঙ্কুর স্বর্গরাজ্যে থাকি সেখানকার অধিবাসীদের বিশেষ উপকার করা হয়।

 যাই হােক, আমি ভারতবর্ষ কিম্বা য়ুরােপ সম্বন্ধে কোনাে নূতন কথা, দুরূহ কথা, কিম্বা কাজের কথা বলতে অক্ষম। আমার মনে স্বতঃ যখন যে ভাবের উদয় হয় তাই মনের মতাে করে প্রকাশ করতে সুখ হয় এবং তাই সকলকে শােনাতে ইচ্ছা করে। উপকার করবার জন্যে নয়, আনন্দ করবার জন্যে।

 এ লেখাটার সেই রকম ভাবেই উৎপত্তি। কখনাে সমুদ্রপথে কখনাে বা য়ুরােপের মহাদেশে যখন যে কথাটা মনে উদয় হয়েছে তখন সেইটেই ডায়ারিতে লিপিবদ্ধ করেছি। বেশি চিন্তা কিম্বা বহুল অন্বেষণ কি কোনাে বিষয়ের চরম সিদ্ধান্ত পর্যন্ত মনে মনে অনুসরণ করবার চেষ্টা করিনি। সমালােচনার ভাষায় যাকে ‘গবেষণা’ বলা হয় আমার এ লেখায় তার চিহ্নমাত্র নেই। কখনাে আশা কখনাে নৈরাশ্য, কখনাে হৃদয় এক দিকে টেনেছে কখনাে অভিজ্ঞতা আর-এক দিকে পথ দেখিয়েছে। হয়তাে একটি কি দুটি মাত্র

৩৫