পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

সমাজপ্রথার অনুকূলে। এই রকম বিপরীত ব্যাপার পড়ে আমার মনে হল, বাস্তবিক বর্তমান য়ুরােপীয় সমাজে স্ত্রীলােকের অবস্থাই নিতান্ত অসংগত। পুরুষেরা না তাদের গৃহপ্রতিষ্ঠা করে দেবে, না তাদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের পূর্ণাধিকার দেবে। রাশিয়ার নাইহিলিস্ট্ সম্প্রদায়ের মধ্যে এত স্ত্রীলােকের সংখ্যা দেখে আপাতত আশ্চর্য বােধ হয়। কিন্তু ভেবে দেখলে য়ুরােপে স্ত্রীলােকের প্রলয়মূর্তি ধরবার অনেকটা সময় এসেছে।

 অতএব সবসুদ্ধ দেখা যাচ্ছে, য়ুরােপীয় সভ্যতায় সর্ব বিষয়েই প্রবলতা এমনি অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে যে, অসমর্থ পুরুষই বলো আর অবল রমণীই বলো, দুর্বলদের আশ্রয়স্থান এ সমাজে যেন ক্রমশই লােপ হয়ে যাচ্ছে। এখন কেবলই কার্য চাই, কেবলই শক্তি চাই, কেবলই গতি চাই; দয়া দেবার এবং দয়া নেবার, ভালােবাসার এবং ভালােবাসা পাবার যারা যােগ্য তাদের এখানে যেন সম্পূর্ণ অধিকার নেই। এই জন্যে স্ত্রীলােকেরা যেন তাদের স্ত্রীস্বভাবের জন্যে সজ্জিত। তারা বিধিমতে প্রমাণ করতে চেষ্টা করছে যে, ‘আমাদের কেবল যে হৃদয় আছে তা নয় আমাদের বলও আছে।’ অতএব ‘আমি কি ডরাই সখি ভিখারী রাঘবে!’ হায়, আমরা ইংরাজশাসিত বাঙালিরাও সেইভাবেই বলছি ‘নাহি কি বল এ ভুজমৃণালে’।

 এই তো অবস্থা। কিন্তু ইতিমধ্যে যখন ইংলন্‌ডে আমাদের স্ত্রীলোেকদের দুরবস্থার উল্লেখ করে মুষলধারায় অশ্রুবর্ষণ হয় তখন এতটা অজস্র করুণা বৃথা নষ্ট হচ্ছে ব’লে মনে অত্যন্ত আক্ষেপ উপস্থিত হয়। ইংরাজের মুলুকে আমরা অনেক আইন এবং অনেক আদালত পেয়েছি। দেশে যত চোর আছে পাহারাওয়ালার সংখ্যা তার চেয়ে ঢের বেশি। নিয়ম সুশৃঙ্খলা সম্বন্ধে কথাটি কবার যাে নেই। ইংরাজ আমাদের সমস্ত দেশটিকে ঝেড়েঝুড়ে, নিংড়ে,

৪১