পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

আমার আশা এবং আমার বিশ্বাস তাঁদের সে আশঙ্কা ব্যর্থ হবে।

 কারণ, যেমন শিক্ষাই পাই-না কেন, আমাদের একেবারে রূপান্তর হওয়া অসম্ভব। ইংরাজি শিক্ষা আমাদের কেবল কতকগুলি ভাব এনে দিতে পারে, কিন্তু তার সমস্ত অনুকূল অবস্থা এনে দিতে পারে না। ইংরাজি সাহিত্য পেতে পারি, কিন্তু ইংলন্‌ড্‌, পাব কোথা থেকে। বীজ পাওয়া যায়, কিন্তু মাটি পাওয়াই কঠিন।

 দৃষ্টান্তস্বরূপে দেখানাে যেতে পারে, বাইব্‌ল্‌ যদিও বহুকাল হতে য়ুরোপের প্রধান শিক্ষার গ্রন্থ, তথাপি য়ুরােপ আপন অসহিষ্ণু দুর্দান্ত ভাব রক্ষা করে এসেছে; বাইবেলের ক্ষমা এবং নম্রতা এখন তাদের অন্তরকে গলাতে পারে নি।

 আমার তো বােধ হয় য়ুরােপের পরম সৌভাগ্যের বিষয় এই যে, য়ুরোপে বাল্যকাল হতে এমন একটি শিক্ষা পাচ্ছে যা তার প্রকৃতির সম্পূর্ণ অনুযায়ী নয়, যা তার সহজ স্বভাবের কাছে নূতন অধিকার এনে দিচ্ছে এবং সর্বদা সংঘাতের দ্বারা তাকে মহত্ত্বের পথে জাগ্রত করে রাখছে।

 য়ুরোপ কেবল যদি নিজের প্রকৃতি-অনুসারিণী শিক্ষা লাভ করত তা হলে য়ুরোপের আজ এমন উন্নতি হত না। তা হলে য়ুরােপের সভ্যতার মধ্যে এমন ব্যাপ্তি থাকত না, তা হলে একই উদারক্ষেত্রে এত ধর্মবীর এবং কর্মবীরের অভ্যুদয় হত না। খৃষ্টধর্ম সর্বদাই য়ুরােপের স্বর্গ এবং মর্ত, মন এবং আত্মার মধ্যে, সামঞ্জস্য সাধন করে রেখেছে।

 খৃষ্টীয় শিক্ষা কেবল যে তলে তলে য়ুরােপীয় সভ্যতার মধ্যে আধ্যাত্মিক রসের সঞ্চার করছে তা নয়, তার মানসিক বিকাশের কত সহায়তা করেছে বলা যায় না। য়ুরোপের সাহিত্যে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। বাইব্‌ল্‌-সহযােগে প্রাচ্যভাব প্রাচ্যকল্পনা য়ুরোপের

৫৩