পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

বাহিরের সম্যক্ ফুর্তিসাধন ক’রে আমাদের বিশেষ ক্ষমতাকে সুস্থ সুন্দর ভাবে সাধারণ প্রকৃতির অঙ্গীভূত করে দেওয়াই আমাদের যথার্থ সুপরিণতি।

 আমরা গৃহকোণে বসে রুদ্র আর্যতেজে সমস্ত সংসারকে আপনমনে নিঃশেষে ভস্মসাৎ ক’রে দিয়ে, মানবজাতির পনেরাে আনা উনিশ গণ্ডা দুই পাইকে একঘরে ক’রে কল্পনা করি— পৃথিবীর মধ্যে আমরা একটা বিশেষ মহত্ব লাভ করেছি, আমরা আধ্যাত্মিক— পৃথিবীতে আমাদের পদধূলি এবং চরণামৃত বিক্রয় করে চিরকাল আমরা অপরিমিত স্ফীতিভাব রক্ষা করতে পারব। অথচ সেটা আছে কি না আছে ঠিক জানি নে, এবং যদি থাকে তাে কোন্ সবল ভিত্তি অধিকার করে আছে তাও বলতে পারি নে। আমাদের সুশিক্ষিত উদার মহৎ হৃদয়ের উপরে প্রতিষ্ঠিত আছে না শাস্ত্রের শ্লোকরাশির মধ্যে নিহিত হয়ে আছে তাও বিবেচনা করে দেখি নে। সকলে মিলে চোখ বুজে নিশ্চিন্ত মনে স্থির করে রেখে দিই কোথাও কোথাও আছে― তা নিজের অন্তরের মধ্যেই হােক আর তুলটের পুঁথির মধ্যেই হােক, বর্তমানের মধ্যেই হোক আর অতীতের মধ্যেই হােক। অর্থাৎ আছেই হোক আর ছিলই হােক, ও একই কথা!

 ধনীর ছেলে যেমন মনে করে ‘আমি ধনী অতএব আমার বিদ্বান হবার কোনাে আবশ্যক নেই— এমন-কি চাকরি-পিপাসুদের মতাে কালেজে পাশ দেওয়া আমার ধনমর্যাদার হানিজনক’, তেমনি আমাদের শ্রেষ্ঠতাভিমানীরা মনে করেন পৃথিবীর মধ্যে আমরা বিশেষ কারণে বিশেষ বড়ো, অতএব আমাদের আর কিছু না করলেও চলে, এমনকি কিছু না করাই কর্তব্য।

 এ দিকে হয়তাে আমার পৈতৃক ধন সমস্ত উড়িয়ে বসে আছি। ব্যাঙ্কে আমার যা ছিল হয়তাে তার কানাকড়ি অবশিষ্ট নেই, কেবল

৫৭