পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

প্রাচীনা এসিয়ার অকালে নিদ্রাভঙ্গ হয়ে মুহুর্‌মুহু হৃৎস্পন্দন হতে থাকবে, এমন উপহাস অনুগ্রহপূর্বক কেউ আমার প্রতি প্রয়ােগ করবেন না।

 কেবল এইটুকুমাত্র দুরাশাকে কোনােমতে মনে স্থান দিয়েছি যে, এই প্রবন্ধে আমার শ্রোতৃবর্গের ক্ষণকালের জন্যে চিত্তবিনােদন হতেও পারে এবং সম্ভবতঃ তাঁদের মনে মধ্যে মধ্যে গুটিকয়েক তর্কের উদয় হবে― যদিও রুচিভেদে সে তর্কের তাঁরা যেমনি মীমাংসা করুন তাতে তাঁদের জীবনযাত্রার লেশমাত্র ভিন্নতা সাধন করবে না। সুধীগণ আমার রচনার বহুল পরিমাণ নীর পরিত্যাগ ক’রে, যৎসামান্য ক্ষীরটুকুমাত্র পথের মধ্যে সম্পূর্ণ পরিপাক-পূর্বক নিরাপদে গৃহে প্রত্যাগত হবেন। এই পরমসুসম্পন্ন চরমশ্রেষ্ঠ বঙ্গসমাজের কিছুমাত্র ইতস্ততঃ হয় এমন দুর্ঘটনা কিছুতেই না ঘটুক—কেবল যদি শ্রোতৃমহােদয়গণের মনে ক্ষণেকের জন্যে এই চিন্তার আভাসমাত্র উদয় হয়ে থাকে যে আমরা যত বড়ােই হই হয়তাে পৃথিবী আমাদের চেয়ে বড়াে, এবং আমাদের সেকাল যত বড়াে কালই হােক না কেন এই অনন্তপ্রবাহিত কালের একটি অংশ মাত্র অধিকার করে ছিল’, যদি মনে সংশয়মাত্র উত্থিত হয় যে ‘কী জানি এই বৃহৎ পৃথিবীতে দৈবক্রমে যদি কোথাও কেহ আমাদের সমকক্ষ থাকে এবং এই অসীমকালে স্বভাবতই এমন পরিবর্তনপরম্পরা ঘটতেও পারে যা আমাদের সনাতন প্রথার আয়ত্তের অতীত’, যদি ভবভূতির সেই মহদ্‌বাক্য কারও স্মরণ হয় যা তিনি অহংকারচ্ছলে উচ্চারণ করে ছিলেন কিন্তু যা শুনে মনে বৃহৎ আশার সঞ্চার হয় এবং ক্ষুদ্র অহংকার আতঙ্কে পলায়ন করে, তবেই আমার শ্রম সফল জ্ঞান করব—

কালােহ্যয়ং নিরবধির্‌বিপুলাচ পৃথ্বী।

৫৯