পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

পরস্পরের স্বভাব চরিত্র জীবনবৃত্তান্ত এবং সৃষ্টির যাবতীয় স্থাবর জঙ্গম এবং সূক্ষ্ম ও স্থূল সত্তা সম্বন্ধে যার যা-কিছু বক্তব্য ছিল সমস্ত নিঃশেষ করে ফেলেছি। আমার বন্ধু চুরোটের ধোঁয়া এবং বিবিধ উড্ডীয়মান কল্পনা একত্র মিশিয়ে সমস্তদিন অপূর্ব ধূম্রলােক সৃজন করেছেন। সেগুলােকে যদি মস্ত একটা ফুলাে রবারের থলির মধ্যে বেঁধে রাখবার কোনাে সুযােগ থাকত তা হলে সমস্ত মেদিনীকে বেলুনে চড়িয়ে একেবারে ছায়াপথের দিকে বেড়িয়ে নিয়ে আসা যেতে পারত। সাধারণতঃ কাল্পনিকেরা যখন কল্পনাক্ষেত্রের হাওয়া খেতে চায় তখন তারা পৃথিবী ছেড়ে হুস করে উড়ে এক আজগবি পুরীতে গিয়ে উপস্থিত হয়। কিন্তু আমার বন্ধুর পদ্ধতি অন্য রকম। তিনি তাঁর প্রবল ধূম্রশক্তির উপরে ফুল ফোর্‌স্ প্রয়ােগ করে পৃথিবীর সমস্ত মৃত্তিকাপিণ্ড একেবারে সঙ্গে করে উড়িয়ে নিয়ে যান। লঘু কিছুই ছাড়েন না। যখন এত ঊর্ধ্বে‌ ওঠা গেছে যে সূক্ষ্ম আধ্যাত্মিক হাওয়ায় আর নিশ্বাস চলে না, সেখানে তিনি হঠাৎ তাঁর থলির মধ্যে থেকে বৈজ্ঞানিক হাওয়া বের করে দিয়ে আশ্চর্য করে দেন। যখন জগতের ডগার উপর চড়ে আধ্যাত্মিক ভাবে একেবারে বিন্দুবৎ হয়ে মিশিয়ে গেছি, তখন তিনি কোথা থেকে তার গােড়াকার মৃত্তিকা তুলে এনে আগা ও গােড়ার সামঞ্জস্য-প্রমাণে প্রবৃত্ত হন। অন্যান্য কল্পনাবিহারীগণকে মাঝে মাঝে মেঘ থেকে হঠাৎ মাটির উপরে ধুপ করে নেমে পড়তে হয়, কিন্তু তাঁর সেই গুরুতর পতনের আবশ্যক হয় না। তিনি একই সময়ে স্বর্গমর্ত গদ্যপদ্যর প্যারাডক্স্‌লােকে ইন্দ্রত্বপদে অধিষ্ঠিত থাকেন।

 এক কথায়, এক দিকে তাঁর যেমন কাব্যাকাশে উধাও হয়ে ওড়বার উদ্যম, অন্য দিকে তেমনি তন্ন তন্ন বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের প্রবৃত্তি। কিন্তু আক্ষেপের বিষয়, এই অনুসন্ধানের প্রবৃত্তিটা

৭১