পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

করে বেড়ায় সেখানে ভদ্র কুলস্ত্রীদের শরীর থেকে লজ্জা এবং বসন অনেকটা পরিমাণে উন্মুক্ত করে ফেলা যদি দোষের না হয়, তবে এই ভােজনসভাতে আপনার পূর্ণমঞ্জরিত দেহসৌন্দর্যের কিঞ্চিৎ আভাস দিয়ে যাওয়া এমনি কী দোষের!

 কিন্তু বিদেশের সমাজনীতি সম্বন্ধে বেশি উৎসাহের সঙ্গে কিছু বলা ভালাে নয়। আমাদের দেশে দেখা যায় বাসরঘরে এবং কোনাে কোনাে বিশেষ উপলক্ষে মেয়েরা যেমন অবাধে লজ্জাহীনতা প্রকাশ করে অন্য কোনাে সভায় তেমন করলে সাধারণের কাছে দুষ্য হ’ত সন্দেহ নেই। সমাজে যেমন নিয়মের বাঁধাবাঁধি থাকে তেমনি মাঝে মাঝে দুটো-একটা ছুটিও থাকে, নইলে পাছে চঞ্চল মানবস্বভাব সমাজভিত্তির মধ্যে শত শত গােপন ছিদ্রপথ খনন করে! ইংরাজিতে যাকে ‘ফ্লার্টেশন’ বলে আমাদের সমাজে তা প্রচলিত নেই, সুতরাং তার কোনাে নামও নেই, কিন্তু গৃহের মধ্যে এমন অনেকগুলি পরিহাসের স্থল রাখা হয়েছে যেখানে অনেক পরিমাণে সমাজনিয়মের সমাজসম্মত লঙ্ঘন চলতে পারে। সেখানে যে রকম রসালাপপূর্ণ অভিনয় চলে তা যে সকল সময়ে সুসম্‌বৃত সুশােভন তা বলা যায় না।

 কিন্তু য়ুরােপীয়েরা যতই চেষ্টা করুক আবরণহীনতা সম্বন্ধে কিছুতেই আমাদের ছাড়িয়ে যেতে পারবে না। এ সম্বন্ধে মানবের যতদূর সাধ্য আমাদের দেশে তার ত্রুটি হয় নি। সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অপূর্ব কারুকৌশলে আমাদের স্ত্রীসমাজে বসন থেকে আবরণের অংশ যতদূর সম্ভব ছাড়িয়ে ফেলা যেতে পারে তা ফেলা হয়েছে। বস্ত্র-পরিধানের দ্বারা অঙ্গকে অনাবৃত করা বঙ্গ-অন্তঃপুরে আশ্চর্য পরিণতি লাভ করেছে। কিন্তু একটা কথা বলা আবশ্যক; ইংরেজ মেয়েদের পক্ষে শরীরের উত্তরভাগ বিশেষরূপে অনাচ্ছন্ন করার

৮২