পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 মধুসূদন উপরের বারান্দা থেকে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল। অবলার বলকে কী করে পরাস্ত করতে হয় এই তার ভাবনা। সকালে উঠে বাড়ির লােকে যখন দেখবে কুমু পিলসুজ মাজছে কী ভাববে। যে চাকরের উপরে মাজাঘষার ভার, সেই বা কী মনে করবে? বিশ্বসুদ্ধ লােকের কাছে তাকে হাস্যাস্পদ করবার এমন তাে উপায় আর নেই।

 একবার মধুসূদনের মনে হল কলতলায় গিয়ে কুমুর সঙ্গে বােঝাপড়া করে নেয়। কিন্তু সকালবেলায় সেই উঠানের মাঝখানে দুজনে বচসা করবে আর বাড়িসুদ্ধ লােকে তামাশা দেখতে বিছানা ছেড়ে বেরিয়ে আসবে এই প্রহসনটা কল্পনা করে পিছিয়ে গেল। মেজো ভাই নবীনকে ডাকিয়ে বললে, “বাড়িতে কী সব ব্যাপার হচ্ছে চোখ রাখ কি?”

 নবীন ছিল বাড়ির ম্যানেজার। সে ভয় পেয়ে বললে, “কেন দাদা, কী হয়েছে?”

 নবীন জানে, দাদার যখন রাগ করবার একটা কারণ ঘটে তখন শাসন করবার একটা মানুষ চাই। দোষী যদি ফসকে যায় তো নির্দোষী হলেও চলে,— নইলে ডিসিপ্লিন থাকে না, নইলে সংসারে ওর রাষ্ট্রতন্ত্রের প্রেস্‌টীজ চলে যায়।

 মধুসূদন বললে, “বড়ােবউ যে পাগলের মতাে কাণ্ডটা করতে বসেছে, তার কারণটা কী সে কি আমি জানি নে মনে কর?”

 বড়ােবউ কী পাগলামি করছে সে-প্রশ্ন করতে নবীন সাহস করলে না পাছে খবর না-জানাটাই একটা অপরাধ বলে গণ্য হয়।

 মধুসূদন বললে, “মেজোবউ ওর মাথা বিগড়ােতে বসেছেন সন্দেহ নেই।”

 বহু সংকোচে নবীন বলতে চেষ্টা করলে, “না, মেজোবউ তাে—”

১০০