পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

না। কখনো কোনো কারণেই মধুসূদন নিজের ব্যবসার প্রতি লেশমাত্র অমনোেযোগী হয় নি, এখন সেই দুর্লক্ষণও দেখা দিল। নিজের মার পীড়া ও মৃত্যুতেও মধুসূদনের কর্মে কিছুমাত্র ব্যাঘাত ঘটে নি এ-কথা সকলেই জানে। তখন তার অবিচলিত দৃঢ়চিত্ততায় অনেকে তাকে ভক্তি করেছে। মধুসূদন আজ হঠাৎ নিজের একটা নূতন পরিচয় পেয়ে নিজে স্তম্ভিত হয়ে গেছে, বাঁধা-পথের বাইরে যে-শক্তি তাকে এমন করে টানছে সে যে তাকে কোন্ দিকে নিয়ে যাবে ভেবে পাচ্ছে না।

 রাত্রের আহার সেরে মধুসূদন ঘরে শুতে এল। যদিও বিশ্বাস করে নি, তবু আশা করেছিল আজ হয়ত কুমুকে শোবার ঘরে দেখতে পাবে। সেইজন্যেই নিয়মিত সময় অতিক্রম করেই মধুসূদন এল। সুস্থ শরীরের চিরাভ্যাসমত একেবারে ঘড়ি-ধরা সময়ে মধুসূদন ঘুমিয়ে পড়ে, এক মুহূর্ত দেরি হয় না। পাছে আজ তেমনি ঘুমিয়ে পড়ার পর কুমু ঘরে আসে তার পরে চলে যায়, এই ভয়ে বিছানায় শুতে গেল না। সোফায় খানিকটা বসে রইল, ছদে খানিকটা পায়চারি করতে লাগল। মধুসূদনের ঘুমোবার সময় ন-টা— আজ একসময়ে চমকে উঠে শুনলে তার দেউড়ির ঘণ্টায় এগারোটা বাজছে। লজ্জা বোধ হল। কিন্তু বিছানার সামনে দু-তিনবার এসে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে, কিছুতে শুতে যেতে প্রবৃত্তি হয় না। তখন স্থির করলে, বাইরের ঘরে গিয়ে সেই রাত্রেই নবীনের সঙ্গে কিছু বোঝাপড়া করে নেবে।

 বাইরের ঘরের সামনের বারান্দায় পৌঁছিয়ে দেখে ঘরে তখনও আলো অলছে। সেও ঘরে ঢুকতে যাচ্ছে এমন সময়ে দেখে নবীন লণ্ঠন হাতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে। দিনের বেলা হলে দেখতে পেত এক মুহূর্তে নবীনের মুখ কী রকম ফ্যাকাশে হয়ে গেল।

১১৯