পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

নুরনগরের সে-প্রতাপ নেই— আয় নেই, ব্যয় বেড়েছে চতুর্গুণ। শতকরা ন-টাকা হারে সুদের ন-পাওআলা মাকড়সা জমিদারির চারদিকে জাল জড়িয়ে চলেছে।

 পরিবারে দুই ভাই, পাঁচ বােন। কন্যাধিক্য-অপরাধের জরিমানা এখনও শেষ হয় নি। কর্তা থাকতেই চার বােনের বিয়ে হয়ে গেল কুলীনের ঘরে। এদের ধনের বহরটুকু হাল আমলের, খ্যাতিটা সাবেক আমলের। জামাইদের পণ দিতে হল কৌলীন্যের মােটা দামে ও ফাঁকা খ্যাতির লম্বা মাপে। এই বাবদেই ন-পার্সেণ্টের সূত্রে গাঁথা দেনার ফঁসে বারো পার্সেণ্টের গ্রন্থি পড়ল। ছােটো ভাই মাথা ঝাড়া দিয়ে উঠে বললে, বিলেতে গিয়ে ব্যারিস্টার হয়ে আসি, রােজগার না করলে চলবে না। সে গেল বিলেতে, বড় ভাই বিপ্রদাসের ঘাড়ে পড়ল সংসারের ভার।

 এই সময়টাতে পূর্বোক্ত ঘােষাল ও চাটুজ্যেদের ভাগ্যের ঘুড়িতে পরস্পরের লখে লখে আর-একবার বেধে গেল। ইতিহাসটা বলি।

 বড়ােবাজারের তনসুকদাস হালওআইদের কাছে এদের একটা মােটা অঙ্কের দেনা। নিয়মিত সুদ দিয়ে আসছে, কোনাে কথা ওঠে নি। এমন সময়ে পূজোর ছুটি পেয়ে বিপ্রদাসের সহপাঠী অমূল্যধন এল আত্মীয়তা দেখাতে। সে হল বড়ো অ্যাটর্নি-আপিসের আর্টিকেল্‌ড্, হেড্-ক্লার্ক। এই চশমা-পরা যুবকটি নুরনগরের অবস্থাটা আড়চোখে দেখে নিলে। সেও কলকাতায় ফিরল আর তনসুকদাসও টাকা ফেরত চেয়ে বসল; বললে, নতুন চিনির কারবার খুলেছে, টাকার জরুরি দরকার।

 বিপ্রদাস মাথায় হাত দিয়ে পড়ল।

 সেই সংকটকালেই চাটুজ্যে ও ঘোষাল এই দুই নামে দ্বিতীয়বার ঘটল বন্দ্ব-সমাস। তার পূর্বেই সরকারবাহাদুরের কাছ থেকে মধুসূদন রাজখেতাব

১২