আর কিছুতেই থাকতে পারলে না, আস্তে আস্তে কুমুর বুকের উপর থেকে তার হাতটি নিজের হাতের উপর তুলে নিলে। কুমু ঘুমের ঘোরে উসখুস করে হাতটা টেনে নিয়ে মধুসূদনের উলটো দিকে পাশ ফিরে শুল।
মধুসূদন আর থাকতে পারলে না, কুমুর কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বললে, “বড়োবউ, তোমার দাদার টেলিগ্রাম এসেছে।”
অমনি ঘুম ভেঙে কুমু দ্রুত উঠে বসল, বিস্মিত চোখ মেলে মধুসূদনের মুখের দিকে অবাক হয়ে রইল চেয়ে। মধুসূদন টেলিগ্রামটা সামনে ধরে বললে, “তোমার দাদার কাছ থেকে এসেছে।” বলে ঘরের কোণে থেকে লণ্ঠনটা কাছে নিয়ে এল।
কুমু টেলিগ্রামটা পড়ে দেখলে, তাতে ইংরেজিতে লেখা আছে, “আমার জন্যে উদ্বিগ্ন হ’য়ো না; ক্রমশই সেরে উঠছি; তোমাকে আমার আশীর্বাদ।” কঠিন উদ্বেগের নিরতিশয় পীড়নের মধ্যে এই সান্ত্বনার কথা পড়ে এক মুহূর্তে কুমুব চোখ ছল ছল করে উঠল। চোখ মুছে টেলিগ্রামখানি যত্ন করে আঁচলের প্রান্তে বাঁধলে। সেইটেতে মধুসূদনের হৃৎপিণ্ডে যেন মোচড় লাগাল। তার পরে কী যে বলবে কিছুই ভেবে পায় না। কুমুই বলে উঠল, “দাদার কি চিঠি আসে নি?”
এর পরে কিছুতেই মধুসূদন বলতে পারলে না যে চিঠি এসেছে। ধাঁ করে বলে ফেললে, “না, চিঠি তো নেই।”
এই ঘরটার মধ্যে রাত্রে দুজনে এমন করে বসে থাকতে কুমুর সংকোচ বোধ হল। সে যখন উঠব-উঠব করছে, মধুসূদন হঠাৎ বলে উঠল, “বড়োবউ, আমার উপর রাগ ক’রো না।”
এ তো প্রভুর উপরোধ নয়, এ যে প্রণয়ীর মিনতি, আর তার মধ্যে