পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

সেই স্পর্শেই ভোর, আর তার খোলের দুধারে যে জল কেটে কেটে পড়ছে সেটা যেন খেয়ালের মধ্যেই নেই। ঘরে অন্য যারা কাজ করছে তারা যে কুমুর সঙ্গে গল্পগুজব করবে এমন যেন একটা সহজ রাস্তা পাচ্ছে না। শ্যামাসুন্দরী একবার বললে, “বউ, সকালেই যদি স্নান কর, গরম জল বলে দাও না কেন। ঠাণ্ডা লাগবে না তো?”

 কুমু বললে, “আমার অভ্যেস আছে।”

 আলাপ আর এগোল না। কুমুর মনের মধ্যে তখন একটা নীরব জপের ধারা চলছে—

পিতেব পুত্রস্য সখেব সখ্যুঃ
প্রিয় প্রিয়ায়ার্হসি দেব সোঢ়ুম।

 তরকারি-কোটা ভাঁড়ার-দেওয়ার কাজ শেষ হয়ে গেল, মেয়েরা স্নানের জন্যে অন্দরের উঠোনে কলতলায় গিয়ে কলরব তুললে।

 মোতির মাকে একলা পেয়ে কুমু বললে, “দাদার কাছ থেকে টেলিগ্রাফের জবাব পেয়েছি।”

 মোতির মা কিছু আশ্চর্য হয়ে বললে, “কখন পেলে?”

 কুমু বললে, “কাল রাত্তিরে।”

 “রাত্তিরে!”

 “হাঁ, অনেক রাত। তখন উনি নিজে এসে আমার হাতে দিলেন।”

 মোতির মা বললে, “তা হলে চিঠিখানাও নিশ্চয় পেয়েছ।”

 “কোন্ চিঠি?”

 “তোমার দাদার চিঠি।”

 ব্যস্ত হয়ে বলে উঠল, “না, আমি তো পাই নি! দাদার চিঠি এসেছে নাকি?”

১২৯