পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

আবেগের এই তীব্র প্রবণতাতেই তাকে ধাক্কা মেরে সচেতন করে তুলল। সে বলে উঠল, “প্রিয়ঃ প্রিয়ায়ার্হসি দেব সোঢ়ুম্”—তবু তুফান থামে না—তাই বার বার বললে। বাইরে যে আরদালি ছিল, আপিস-ঘরে তাদের বউরানীর এই আপন-মনে মন্ত্র-আবৃত্তি শুনে সে অবাক হয়ে গেল। অনেকক্ষণ বলতে বলতে কুমুর মন শান্ত হয়ে এল। তখন চিঠিখানি সামনে রেখে চৌকিতে বসে হাত জোড় করে স্থির হয়ে রইল। চিঠি সে চুরি করে পড়বে না এই তার পণ।

 এমন সময় মধুসূদন ঘরে ঢুকেই চমকে উঠে দাঁড়াল—কুমু তার দিকে চাইলেও না। কাছে এসে দেখলে, ডেস্কের উপর সেই চিঠি। জিজ্ঞাসা করলে, “তুমি এখানে যে!”

 কুমু নীরবে শান্তদৃষ্টিতে মধুসূদনের মুখের দিকে চাইলে। তার মধ্যে নালিশ ছিল না। মধুসূদন আবার জিজ্ঞাসা করলে, “এ-ঘরে তুমি কেন?”

 এই বাহুল্যপ্রশ্নে কুমু অধৈর্যের স্বরেই বললে, “আমার নামে দাদার চিঠি এসেছে কি না তাই দেখতে এসেছিলেম।”

 সে-কথা আমাকে জিজ্ঞাসা করলে না কেন, এমনতরো প্রশ্নের রাস্তা কাল রাত্তিরে মধুসূদন আপনি বন্ধ করে দিয়েছে। তাই বললে, “এ-চিঠি আমিই তোমার কাছে নিয়ে যাচ্ছিলুম, সে-জন্যে তোমার এখানে আসবার তো দরকার ছিল না।”

 কুমু একটুখানি চুপ করে রইল, মনকে শান্ত করে তার পরে বললে, “এ-চিঠি তুমি আমাকে পড়তে দিতে ইচ্ছে কর নি, সেইজন্যে এ-চিঠি আমি পড়ব না। এই আমি ছিঁড়ে ফেললুম। কিন্তু এমন কষ্ট আমাকে আর কখনো দিয়ো না। এর চেয়ে কষ্ট আমার আর কিছু হতে পারে না।”

১৩৩