পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 মােতির মা চলে গেল। নবীন আর থাকতে পারলে না, আস্তে আস্তে তার বৌদিদির ঘরের বাইরে এসে দেখলে, কুমু তার শােবার ঘরের মেজের বিছানার উপর পড়ে আছে। যে-চিঠিখানা ছিঁড়ে ফেলেছে তার বেদনা কিছুতেই মন থেকে যাচ্ছে না।

 নবীনকে দেখে তাড়াতাড়ি উঠে বসল। নবীন বললে, “বউদিদি, প্রণাম করতে এসেছি, একটু পায়ের ধুলাে দাও।”

 বউদিদির সঙ্গে নবীনের এই প্রথম কথাবার্তা।

 কুমু বললে, “এস, ব’সো।”

 নবীন মাটিতে বসে বললে, “তােমাকে সেবা করতে পারব এই খুশিতে বুক ভরে উঠেছিল। কিন্তু নবীনের কপালে এতটা সৌভাগ্য সইবে কেন? কটা দিন মাত্র তােমাকে পেয়েছি, কিছুই করতে পারি নি এই আফসােস মনে রয়ে গেল।”

 কুমু জিজ্ঞাসা করলে, “কোথায় যাচ্ছ তােমরা?”

 নবীন বললে, “দাদা আমাদের দেশেই পাঠাবে। এর পরে তােমার সঙ্গে বােধ হয় আর দেখা হবার সুবিধা হবে না, তাই প্রণাম করে বিদায় নিতে এসেছি।” বলে যেই সে প্রণাম করলে মােতির মা ছুটে এসে বললে, “শীঘ্র চলে এস। কর্তা তােমার খোঁজ করছেন।”

 নবীন তাড়াতাড়ি উঠে চলে গেল। মােতির মাও গেল তার সঙ্গে।

 সেই বাইরের ঘরে দাদা তার ডেস্কের কাছে বসে; নবীন এসে দাঁড়াল। অন্যদিনে এমন অবস্থায় তার মুখে যে-রকম আশঙ্কার ভাব থাকত আজ তা কিছুই নেই।

 মধুসূদন জিজ্ঞাসা করলে, “ডেস্কের চিঠির কথা বড়ােবউকে কে বললে?

 নবীন বললে, “আমিই বলেছি।”

১৩৬