পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

মানুষের প্রতি নানা বিরুদ্ধ ধাতু মিশােল করে তৈরি, তার একটা প্রমাণ এই যে, মধুসূদন নবীনকে গভীরভাবে স্নেহ করে। তার অন্য দুই ভাই রজবপুরে বিষয়সম্পত্তির কাজ নিয়ে পাড়াগাঁয়ে পড়ে আছে, মধুসূদন তাদের বড়ো একটা খোঁজ রাখে না। পিতার মৃত্যুর পর নবীনকে কে মধুসূদন কলকাতায় নিয়ে পড়াশুনো করিয়েছে এবং তাকে বরাবর রেখেছে নিজের কাছে। সংসারের কাজে নবীনের স্বাভাবিক পটুতা। তার কারণ সে খুব খাঁটি। আর একটা হচ্ছে, তার কথাবার্তায় ব্যবহারে সকলেই তাকে ভালােবাসে। এ-বাড়িতে যখন কোনাে ঝগড়াঝাঁটি বাধে তখন নবীন সেটাকে সহজে মিটিয়ে দিতে পারে। নবীন সব কথায় হাসতে জানে, আর লোকদের শুধু কেবল সুবিচার করে না, এমন ব্যবহার করে যাতে প্রত্যেকেই মনে করে, তারই ’পরে বুঝি ওর বিশেষ পক্ষপাত।

 নবীনকে মধুসূদন যে মনের সঙ্গে স্নেহ করে তার একটা প্রমাণ, মােতির মাকে মধুসূদন দেখতে পারে না। যার প্রতি ওর মমতা তার প্রতি ওর একাধিপত্য চাই। সেই কারণে মধুসূদন কেবল কল্পনা করে মােতির মা যেন নবীনের মন ভাঙাতেই আছে। ছােটো ভাইয়ের প্রতি। ওর যে পৈতৃক অধিকার, বাইরে থেকে এক মেয়ে এসে সেটাতে কেবলই বাধা ঘটায়। নবীনকে মধুসূদন যদি বিশেষ ভালাে না বাসত তাহলে অনেক দিন আগেই মােতির মার নির্বাসনদণ্ড পাকা হত।

 মধুসুদন ভেবেছিল, এইটুকু কাজ সেরেই আবার একবার আপিসে চলে যাবে। কিন্তু কোনােমতেই মনের মধ্যে জোর পেলে না। কুমু সেই যে চিঠিখানা ছিড়ে দিয়ে চলে গেল সেই ছবিটি তার মনে গভীর করে আঁকা হয়ে গেছে। সে এক আশ্চর্য ছবি, এমনতরো কিছু সে কখনাে মনে করতে পারত না। একবার তার চিরকালের সন্দেহ-করা

১৩৮